Tuesday, 15 January 2013

চাঁদের তৃতীয় পিঠ ("তিনটি ডানার পাখি" বইয়ের কবিতা)

চাঁদের তৃতীয় পিঠ

চন্দন ভট্টাচার্য

তখন আমি ছিলাম চাঁদের অন্ধকার পিঠে
সামান্য রাগ হলে বাসন ছুঁড়তাম, পা-ই কথা বলত ক্যানিজিয়া।
সবচেয়ে বাড়ির ছোট ভ্রমর, ছোট ডানা দুটো উড়তে উড়তে
মাটিতে ধপাস পর্যন্ত হাত মুঠো ক'রে থাকতো সবাই

আমি খুব কথা চালাতাম, অসম্ভব কথা
চাঁদও অবাক হতো --- কোন নক্ষত্র থেকে এসব পোকা
এসেছে মগজে !
কিন্তু হিংসায় একটা উচিত মোমও জ্বালিয়ে দিত না
তাই যে-সব রাতপাখি পৃথিবী থেকে এ-পর্যন্ত ডেইলি প্যাসেঞ্জার
ওদের ডানায় ডানায় আন্দাজে আন্দাজে লিখতাম
ওরা সাঁই ক'রে নেমে যেত মাটিতে আর পরের দিন
খবর দিত --- বাবু, তোমার তিনটে কবিতার চোখ ফুটেছে
তিনটেই মিষ্টি বেড়ালছানা; বাবু, তোমার একটা লেখা
কাঁঠালগাছ হবে ...

এই করতে করতে খড়খড় ক'রে চাঁদ ঘুরে বসল একদিন
আমিও এসে গেলাম আলোকধারায় তাই না হারায়
এসে গেলাম লিটল ম্যাগাজিনে আর বইমেলায় দু'তিন দিন
আগে তো ভাবিনি, এখন বলতে ভয় করে
আমার ফুল।গুলো সবাই ক্ষীণজীবী
আমার এই অর্ধেক-ফকির ফড়িংপ্রজাতি, খরগোশসন্তান
কে এদের বাঁচিয়ে রাখবে আর কে আদর দেবে
আজ যখন চাঁদের তৃতীয় পিঠে রওনা হ'য়ে যাই

Monday, 14 January 2013

ঝাড়-খাওয়া কবিতাগুচ্ছঃ আট ("জগৎমঙ্গল কাব্য" বইয়ের কবিতা)

ঝাড়-খাওয়া কবিতাগুচ্ছ
আট

চন্দন ভট্টাচার্য

লম্বা ক'রে "পুল" লেখা পেটের দরজা টেনে
আমি তাকে ঢুকতে দিয়েছি, তারপর গোলাপের কুঁড়ি-আঁকা 
প্লেটের ওপর চোখদুটো রেখে বলেছি "খাও"

খাও-রাক্ষস প্রতিধ্বনি করেছে একদম খালি ওই
পেটের গম্বুজে, ওর শান্ত চবুতরায়। আমি যেহেতু
শরীরে গরীব, ফুল-স্লীভ অমনোযোগ চাপা সেই মেয়ে
একটু মরিচ চোখের মণিতে ছড়িয়ে দিতে দিতে বলেছে
ফর্ক কোথায় যে খাবো !

বুকের বামাবর্ত খুলে একজোড়া পাঁজর
হাতে তুলে দিতে যত দেরি,
কোমরের ভাঁজ থেকে সে নামিয়েছে টোপর টোপর ফুচকাদের,
স্তন থেকে ফিনকিতে তেঁতুলগোলা জল
সেই আহারদৃশ্যের দিকে তাকিয়েছে আমার কোটর
মায়াভরে, কৌতূহলভরে

কৌতূহলভরে ক্ষমাভরে সেও মানিব্যাগ থেকে
বের করেছে ব্যান্ড এইড গোষ্ঠীর কিছু চুমু
আর আমার সী-লেভেল খুব নেমে গেছে ব'লে
সেই এক্সপায়ার্ড বস্তু খেয়ে হলাম অজ্ঞান ভেদবমি

লম্বা ক'রে "পুশ" লেখা পেটের দরজা খুলে
সে আমাকে সুতরাং নামিয়ে দিয়েছে ফুটপাথে, আর
শরীরের গুলতি থেকে চুম্বনের পায়রাগুলো তাল তাল বেরিয়ে আসছে ...

Sunday, 6 January 2013

আমি উন্মাদ আত্মজীবনীতেঃ এক ("ভুবনভোজন চলছে" বইয়ের কবিতা)

আমি উন্মাদ আত্মজীবনীতে
এক

চন্দন ভট্টাচার্য

কাল বিকেলবেলা পাড়ার গলিতে পৌঁছে তোকে
ছুঁড়ে ফেলেছি রাস্তায়, কনুইভাঙ্গা বডি আস্তে সোজা
হচ্ছে --- একটা পিঁপড়ে ভয় পেল। আমি হাঁটলাম বাড়ির দিকে,
তোকে চাপা দিচ্ছে খড়মজুতো শ্রী-খাদিম। পাড়ার দোকান থেকে
টুথব্রাশ কিনেছি, বোতলের বাঁচা জল আহ তোর গায়ে উপুড়
করল টিউশানি ফেরত ছাত্র। আমি স্নান-গেঞ্জি-পাজামা ---
টিভি নিয়ে বসলেই তোর পেটের ওপর উঠে দাঁড়াবে শেয়ার ট্যাক্সি
"হরিদেবপুর আর একজন হরিদেবপুর"..... 

দেখছিলাম ডিসকাভারিতে অ্যাটলান্টিকের ভেতর সমুদ্রমাছ আমি 
ডাইনিং টেবিলে ব'সে, এক মাতাল খক ক'রে থুতু ফেলছে 
একটুর জন্যে তোর গায়ে লাগল। হাওয়া দিল এখানে, ওখানেও,
দেশি মুরগির বাচ্চা হয়ে উড়লি নর্দমার কোলে কোলে।  
তারপর আমিও আলো নিভিয়ে বিছানায় বসেছি চোখবন্ধ, 
ওমনি শিরদাঁড়ার ওপরপিঠে ফটাশ ক'রে খুলছে সবুজাক্ষি, 
সবুজ জ্যোতিষ্ক-আলো ঘরদরজা শিউলিগাছ
পার হয়ে টেলিফোনবুথ রিকশামোড় স্ট্যাচু ক'রে এক দৌড়ে গিয়ে
পেছন থেকে জাপটে ধরেছে তোকে ......

আস্তে ক'রে ধুলোমাখা মুখ ভেসে উঠল সোনি-র পর্দায়,
কাগজের খসখসে গলায় বলছিস রক্তাক্ত সন্ধেবেলাটার অপমান, 
আগামিকাল তোর কপালে কী আছে, আগামি পরশু ম'রে আবার 
কাঠ হয়ে যাবার আগে বলতে বলতে হা হা ক'রে কেঁদে উঠছিস রে সোনা, 
আমার ৪০-এর বি বাসের টিকিট