Monday, 28 January 2013

প্রাইভেট ফার্মে এটা হবে (প্রকাশিত)


Tuesday, 22 January 2013

সরস্বতী-ফুল ("ভুবনভোজন চলছে" বইয়ের কবিতা)


সরস্বতী-ফুল

চন্দন ভট্টাচার্য

কে একটু গুছিয়ে রাখবে আমাকে
স্নানের পর চুল মুছিয়ে রাখবে
বাড়িভর্তি বকুনি-খাওয়া চোখ সারিয়ে দিয়ে ----
যে-তুমি শুরুতে একটু বড়, এই পাঁচ বছরের,
বুকের সরস্বতীফুলে আমি মুখ ঘ'ষে রাগ কমাই ----
পড়তে বসবে পিঠে-পিঠ খেজুরপাটির রোদ্দুরে আর
পাঁচ মিনিটে ভারতের এক এক পৃষ্ঠা খনিজ  সম্পদ
মাথার মধ্যে উড়িয়ে দিচ্ছি দেখে কী গর্বমাখা হাসি !
কে আমি যখন ছোট-বলে ফুটবল মহাবীরের মাঠে,
ঘাসের লুকোনো খোয়ায় কাঁচা নখ উলটে গেলে
জল দিয়ে ধুয়ে সে জায়গা --- ইস লাগছে --- জার্মানিলতা
দুহাতে চটকে --- ছাড়ো, জ্বালা করে --- আমাকে শাড়িছেঁড়া-য়
ব্যান্ডেজ বেঁধে  ---- চুপ করবি? --- দাঁত দিয়ে কেটে দুফালি ডগা
ঘুরিয়ে গিঁট বেঁধে দেবে সাতদিন আর মাঠমুখো যদি হোস, কে !

এবার সন্ধেবেলা বই নিয়ে লেপের মধ্যে শুধু
পাদুটো ঢোকালাম, ওহ চেঁচিয়েই তো পড়ছি
বেশ ঘুমোও আজকেও, খেতে যদি ডাকি, কে আমার মাথায়
বিলি কেটে ওঠ ওঠ এই ক্যাবলা সারাদিনের
মস্তানি শেষ?....কেমন, ঘুষি মারল তো !
খারাপ জায়গায় লেগে যাবে, লাথি পর্যন্ত চালায়
আহারে ঘা খেলি কাটা আঙুলটাতে, ও-পাগল, আমি সেঁক
দিয়ে দেবো, সুড়সুড়ি দেবো, এখন হাঁ করো, কে আমাকে
চোখবন্ধ খাইয়ে দেবে তেলাপিয়ার কাঁটা বেছে
আলুভাতের লংকা; আচ্ছা বাবা, আজ তোর সঙ্গেই
ঘুমবো নয়... আমার কঞ্চি-নুনু দিয়ে ইঞ্জেকশান লাগালে সে নেবে !
নেওয়ামাত্র হু হু ক'রে ফুলে উঠল শরীর, বুকে গুল্ম
ভ'রে যাচ্ছে, গলার আওয়াজ মেঘ-মেঘ আর ধকাস ধকাস
ক'রে বেরিয়ে আসে রক্তমাংস ওই নজল-পথে সাবোধান !

তবে বলো তুমি তোষকের নিচে খুচরো টাকা
চাপা দিয়ে আমাকে ভুলে যাবে না ব্যবহার,
মিক্সিতে পেঁয়াজ রস করতে করতেও মাই দিচ্ছো আর
পা-সন্ধির সাদা তৃণ তুলে ফ্যালো একটানে, হ্যাঁচকা
না লাগে ! কারও সঙ্গে বেঁধে দিলেও আস্তে ক'রে খুলে
পেছনের ঘোরানো সিঁড়ি দিয়ে নেমে আবার
আমার পিঠে থুতনির ওই একডানা কে যে সে ----
অন্ধকারে ভূতবাদুড়ের সঙ্গে আমাকে না উড়িয়ে
না দিয়ে বোরোলীনের-সংসার-বন্ধ-শাস্তি পরীক্ষায়
সেকেন্ড হয়ে গেছি ব'লে, মুখোমুখি আহারপাত্র দুজনে ---
নিজের মুখের গ্রাস কেড়ে খাওয়াব এ-ওকে,
কে আমাকে কোনও দিন কিছুতেই কোনও দিন কিছুতেই
মরতে দেবে না ....

পঞ্চায়েত ("জাতকের কবিতা" বইয়ের কবিতা)


Monday, 21 January 2013

মা ("ভুবনভোজন চলছে" বইয়ের কবিতা)


অস্থায়ী আকাশ ("তিনটি ডানার পাখি" বইয়ের কবিতা)

অস্থায়ী আকাশ
চন্দন ভট্টাচার্য

আমি যখন জনশূন্য হই, যখন শেষবন্ধু ধুলো উড়িয়ে
কাছে দাঁড়িয়েছে
আমাকেও তুলে কাগজের ঠোঙার মতো অস্থায়ী আকাশে
ঠাশ ক'রে সাপবেলুন ফাটিয়ে তার খোলশ ছেড়ে গেছে
তখন আমি ভূত হই, ভিজে পেছল টালির চালে 
রাতে বসা কাক হই তখন

হিমার্ত রাতকেও বলিহারি, চোখের জলের ছোট ছোট
পিরামিড সাজিয়ে রেখেছে ! তাদের পাশ কাটিয়ে,
কোনওটা হয়তো ভেস্তে দিয়ে আমি উড়ন্ত এক হাঁটা শুরু হই
দুদিকে নিজের সমাধির পাশে গালে হাত দিয়ে বসে থাকা মানুষ
সেই যে সমবেত গান হতোঃ কথা ও সুর মা মনসা,
সেই যে বেড়ার ফাঁক দিয়ে ছিটকে রাস্তায় পড়তো
হারিকেনের গোল গোল ইলতুতমিস, ইবন বতুতা --- তাদের সামান্য কাছে
টিনের বাউন্ডারি, ভেতরে যাত্রাদল নেই, ফাঁকা মাঠ
বসে বসে সিগারেট টানছে, 'ক্যালিপটাস গাছ উঠে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছে
যাত্রা শেষ, তবু লম্বা পথশূন্য পথ পড়ে আছে....
পেছন থেকে ভেসে আসে কলের প্রথম জল বালতিতে,
রোদের পিরামিড তৈরি হবে --- তার খুটখাট ব্যস্ত শ্রমিকেরা,
আর ট্রেনশব্দ, মানে চলন্ত বন্ধু কোনও স্থির বন্ধুর কাছ ঘেঁষে আবার দাঁড়াল....

Tuesday, 15 January 2013

চাঁদের তৃতীয় পিঠ ("তিনটি ডানার পাখি" বইয়ের কবিতা)

চাঁদের তৃতীয় পিঠ

চন্দন ভট্টাচার্য

তখন আমি ছিলাম চাঁদের অন্ধকার পিঠে
সামান্য রাগ হলে বাসন ছুঁড়তাম, পা-ই কথা বলত ক্যানিজিয়া।
সবচেয়ে বাড়ির ছোট ভ্রমর, ছোট ডানা দুটো উড়তে উড়তে
মাটিতে ধপাস পর্যন্ত হাত মুঠো ক'রে থাকতো সবাই

আমি খুব কথা চালাতাম, অসম্ভব কথা
চাঁদও অবাক হতো --- কোন নক্ষত্র থেকে এসব পোকা
এসেছে মগজে !
কিন্তু হিংসায় একটা উচিত মোমও জ্বালিয়ে দিত না
তাই যে-সব রাতপাখি পৃথিবী থেকে এ-পর্যন্ত ডেইলি প্যাসেঞ্জার
ওদের ডানায় ডানায় আন্দাজে আন্দাজে লিখতাম
ওরা সাঁই ক'রে নেমে যেত মাটিতে আর পরের দিন
খবর দিত --- বাবু, তোমার তিনটে কবিতার চোখ ফুটেছে
তিনটেই মিষ্টি বেড়ালছানা; বাবু, তোমার একটা লেখা
কাঁঠালগাছ হবে ...

এই করতে করতে খড়খড় ক'রে চাঁদ ঘুরে বসল একদিন
আমিও এসে গেলাম আলোকধারায় তাই না হারায়
এসে গেলাম লিটল ম্যাগাজিনে আর বইমেলায় দু'তিন দিন
আগে তো ভাবিনি, এখন বলতে ভয় করে
আমার ফুল।গুলো সবাই ক্ষীণজীবী
আমার এই অর্ধেক-ফকির ফড়িংপ্রজাতি, খরগোশসন্তান
কে এদের বাঁচিয়ে রাখবে আর কে আদর দেবে
আজ যখন চাঁদের তৃতীয় পিঠে রওনা হ'য়ে যাই

Monday, 14 January 2013

ঝাড়-খাওয়া কবিতাগুচ্ছঃ আট ("জগৎমঙ্গল কাব্য" বইয়ের কবিতা)

ঝাড়-খাওয়া কবিতাগুচ্ছ
আট

চন্দন ভট্টাচার্য

লম্বা ক'রে "পুল" লেখা পেটের দরজা টেনে
আমি তাকে ঢুকতে দিয়েছি, তারপর গোলাপের কুঁড়ি-আঁকা 
প্লেটের ওপর চোখদুটো রেখে বলেছি "খাও"

খাও-রাক্ষস প্রতিধ্বনি করেছে একদম খালি ওই
পেটের গম্বুজে, ওর শান্ত চবুতরায়। আমি যেহেতু
শরীরে গরীব, ফুল-স্লীভ অমনোযোগ চাপা সেই মেয়ে
একটু মরিচ চোখের মণিতে ছড়িয়ে দিতে দিতে বলেছে
ফর্ক কোথায় যে খাবো !

বুকের বামাবর্ত খুলে একজোড়া পাঁজর
হাতে তুলে দিতে যত দেরি,
কোমরের ভাঁজ থেকে সে নামিয়েছে টোপর টোপর ফুচকাদের,
স্তন থেকে ফিনকিতে তেঁতুলগোলা জল
সেই আহারদৃশ্যের দিকে তাকিয়েছে আমার কোটর
মায়াভরে, কৌতূহলভরে

কৌতূহলভরে ক্ষমাভরে সেও মানিব্যাগ থেকে
বের করেছে ব্যান্ড এইড গোষ্ঠীর কিছু চুমু
আর আমার সী-লেভেল খুব নেমে গেছে ব'লে
সেই এক্সপায়ার্ড বস্তু খেয়ে হলাম অজ্ঞান ভেদবমি

লম্বা ক'রে "পুশ" লেখা পেটের দরজা খুলে
সে আমাকে সুতরাং নামিয়ে দিয়েছে ফুটপাথে, আর
শরীরের গুলতি থেকে চুম্বনের পায়রাগুলো তাল তাল বেরিয়ে আসছে ...

Sunday, 6 January 2013

আমি উন্মাদ আত্মজীবনীতেঃ এক ("ভুবনভোজন চলছে" বইয়ের কবিতা)

আমি উন্মাদ আত্মজীবনীতে
এক

চন্দন ভট্টাচার্য

কাল বিকেলবেলা পাড়ার গলিতে পৌঁছে তোকে
ছুঁড়ে ফেলেছি রাস্তায়, কনুইভাঙ্গা বডি আস্তে সোজা
হচ্ছে --- একটা পিঁপড়ে ভয় পেল। আমি হাঁটলাম বাড়ির দিকে,
তোকে চাপা দিচ্ছে খড়মজুতো শ্রী-খাদিম। পাড়ার দোকান থেকে
টুথব্রাশ কিনেছি, বোতলের বাঁচা জল আহ তোর গায়ে উপুড়
করল টিউশানি ফেরত ছাত্র। আমি স্নান-গেঞ্জি-পাজামা ---
টিভি নিয়ে বসলেই তোর পেটের ওপর উঠে দাঁড়াবে শেয়ার ট্যাক্সি
"হরিদেবপুর আর একজন হরিদেবপুর"..... 

দেখছিলাম ডিসকাভারিতে অ্যাটলান্টিকের ভেতর সমুদ্রমাছ আমি 
ডাইনিং টেবিলে ব'সে, এক মাতাল খক ক'রে থুতু ফেলছে 
একটুর জন্যে তোর গায়ে লাগল। হাওয়া দিল এখানে, ওখানেও,
দেশি মুরগির বাচ্চা হয়ে উড়লি নর্দমার কোলে কোলে।  
তারপর আমিও আলো নিভিয়ে বিছানায় বসেছি চোখবন্ধ, 
ওমনি শিরদাঁড়ার ওপরপিঠে ফটাশ ক'রে খুলছে সবুজাক্ষি, 
সবুজ জ্যোতিষ্ক-আলো ঘরদরজা শিউলিগাছ
পার হয়ে টেলিফোনবুথ রিকশামোড় স্ট্যাচু ক'রে এক দৌড়ে গিয়ে
পেছন থেকে জাপটে ধরেছে তোকে ......

আস্তে ক'রে ধুলোমাখা মুখ ভেসে উঠল সোনি-র পর্দায়,
কাগজের খসখসে গলায় বলছিস রক্তাক্ত সন্ধেবেলাটার অপমান, 
আগামিকাল তোর কপালে কী আছে, আগামি পরশু ম'রে আবার 
কাঠ হয়ে যাবার আগে বলতে বলতে হা হা ক'রে কেঁদে উঠছিস রে সোনা, 
আমার ৪০-এর বি বাসের টিকিট