Tuesday, 22 January 2013

সরস্বতী-ফুল ("ভুবনভোজন চলছে" বইয়ের কবিতা)


সরস্বতী-ফুল

চন্দন ভট্টাচার্য

কে একটু গুছিয়ে রাখবে আমাকে
স্নানের পর চুল মুছিয়ে রাখবে
বাড়িভর্তি বকুনি-খাওয়া চোখ সারিয়ে দিয়ে ----
যে-তুমি শুরুতে একটু বড়, এই পাঁচ বছরের,
বুকের সরস্বতীফুলে আমি মুখ ঘ'ষে রাগ কমাই ----
পড়তে বসবে পিঠে-পিঠ খেজুরপাটির রোদ্দুরে আর
পাঁচ মিনিটে ভারতের এক এক পৃষ্ঠা খনিজ  সম্পদ
মাথার মধ্যে উড়িয়ে দিচ্ছি দেখে কী গর্বমাখা হাসি !
কে আমি যখন ছোট-বলে ফুটবল মহাবীরের মাঠে,
ঘাসের লুকোনো খোয়ায় কাঁচা নখ উলটে গেলে
জল দিয়ে ধুয়ে সে জায়গা --- ইস লাগছে --- জার্মানিলতা
দুহাতে চটকে --- ছাড়ো, জ্বালা করে --- আমাকে শাড়িছেঁড়া-য়
ব্যান্ডেজ বেঁধে  ---- চুপ করবি? --- দাঁত দিয়ে কেটে দুফালি ডগা
ঘুরিয়ে গিঁট বেঁধে দেবে সাতদিন আর মাঠমুখো যদি হোস, কে !

এবার সন্ধেবেলা বই নিয়ে লেপের মধ্যে শুধু
পাদুটো ঢোকালাম, ওহ চেঁচিয়েই তো পড়ছি
বেশ ঘুমোও আজকেও, খেতে যদি ডাকি, কে আমার মাথায়
বিলি কেটে ওঠ ওঠ এই ক্যাবলা সারাদিনের
মস্তানি শেষ?....কেমন, ঘুষি মারল তো !
খারাপ জায়গায় লেগে যাবে, লাথি পর্যন্ত চালায়
আহারে ঘা খেলি কাটা আঙুলটাতে, ও-পাগল, আমি সেঁক
দিয়ে দেবো, সুড়সুড়ি দেবো, এখন হাঁ করো, কে আমাকে
চোখবন্ধ খাইয়ে দেবে তেলাপিয়ার কাঁটা বেছে
আলুভাতের লংকা; আচ্ছা বাবা, আজ তোর সঙ্গেই
ঘুমবো নয়... আমার কঞ্চি-নুনু দিয়ে ইঞ্জেকশান লাগালে সে নেবে !
নেওয়ামাত্র হু হু ক'রে ফুলে উঠল শরীর, বুকে গুল্ম
ভ'রে যাচ্ছে, গলার আওয়াজ মেঘ-মেঘ আর ধকাস ধকাস
ক'রে বেরিয়ে আসে রক্তমাংস ওই নজল-পথে সাবোধান !

তবে বলো তুমি তোষকের নিচে খুচরো টাকা
চাপা দিয়ে আমাকে ভুলে যাবে না ব্যবহার,
মিক্সিতে পেঁয়াজ রস করতে করতেও মাই দিচ্ছো আর
পা-সন্ধির সাদা তৃণ তুলে ফ্যালো একটানে, হ্যাঁচকা
না লাগে ! কারও সঙ্গে বেঁধে দিলেও আস্তে ক'রে খুলে
পেছনের ঘোরানো সিঁড়ি দিয়ে নেমে আবার
আমার পিঠে থুতনির ওই একডানা কে যে সে ----
অন্ধকারে ভূতবাদুড়ের সঙ্গে আমাকে না উড়িয়ে
না দিয়ে বোরোলীনের-সংসার-বন্ধ-শাস্তি পরীক্ষায়
সেকেন্ড হয়ে গেছি ব'লে, মুখোমুখি আহারপাত্র দুজনে ---
নিজের মুখের গ্রাস কেড়ে খাওয়াব এ-ওকে,
কে আমাকে কোনও দিন কিছুতেই কোনও দিন কিছুতেই
মরতে দেবে না ....

No comments:

Post a Comment