Saturday, 16 April 2016

‘ছাড়ো, আমার ইচ্ছে নেই’

‘ছাড়ো, আমার ইচ্ছে নেই’
তোমার ফাটল আমি ভরাতে যাচ্ছি
ব্যাঙ, ইঁদুর, কুমড়ো, ঝিঙে দিয়ে
তোমার আরাম কোথাও পাচ্ছি না
আমার বউ তো এমনি মরেনি
তুমি তাকে ধাক্কা দিয়ে ট্রেন থেকে...
আমার ছেলের জন্যে কী ছক করেছ কে জানে!
বিষ খাওয়াবে, নাকি নিজের মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দেবে ওর?
ওই গোখরোর চোখে রক্তকাজল পরিয়েছি
ওই কেলেঙ্কারিভরা হাতে দিয়েছি সবচেয়ে ঠান্ডা মৃদু
মাধবী মাধবী
এখন তোমাকে ফসকে যে এতে-ওতে মুখ দিই
কিন্তু অতোটা রসুন আর মরিচবাটা কে খাওয়াবে, বলো?
তোমার মাখন আমি কোথাও পাচ্ছি না

ইঁদুর প্রেম

ইঁদুর প্রেম
সবুজ পতাকার গন্ধ মিলিয়ে যাওয়ার আগেই
ঝাঁকুনি দিয়ে থেমেছ, অন্ধকার...।
পৌঁছনো আর অজ্ঞাতবাস --- দুদিক থেকে ফুরিয়ে গেছি
যেখানে হাগিস-পরা ফুটফুটে অহংকার দাঁড়িয়ে থাকে মাঝরাস্তায়
যেখানে মহাভারতের সব মরে যাওয়া তীর আমার পেটে ধানশাবক, সেই মোকামে
কুয়াশাগ্যাসের ভেতর দেড় হাজার সেতু ত্যায় করেছি
যেখানে তিতাস একটা জুতোর নাম...
তোমার সহাস্য স্নানঘরে ইঁদুর ধরতে গিয়েছিলাম
জানলা দিয়ে দেখি, একটা লোক হাই তুলতে তুলতে ছুটছে
একটা সিগারেট শেষ করার আগে গোটা শতাব্দী ফুরলো
বুকে আদরের দাগ মিলিয়ে যাওয়ার আগেই কবরে গেছে প্রেম

অচেনাপূর্ণ

অচেনাপূর্ণ
প্রজাতন্ত্র দিবসে সমস্যা অনেক, সমাধান আম্বিয়া-সোহরাব।
শরিফকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলল জাপানি এফ, পঞ্চধাতুর 
ভোটমডেল বাংলায়। সঞ্চয়ে করছাড় মাটির তলা দিয়ে
আস্তে আস্তে পৌঁছে যাবে সোনার দোকানে, এদিকে সব সময়
মল-দ্বার খোলা রেখে একুশ শিশু-উদ্বাস্তুর দেহ পেল ইস্পাত-শিল্প।
চুলের সমস্যা থেকে মুক্তি নাকতলার। আর স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে
কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করল এটাওটাসেটা...।
বৈচিত্র্যই ভারতের দাড়ি-গোঁফ, বলেছে সেলুন-বিরোধী সমাবেশ।
শ্বশুরবাড়ির লাশ কুচকাওয়াজে যোগ দিতে বন্ধ চা-বাগানে চলল,
তা ব’লে আরোগ্যের পথে যাবে কি নার্সিংহোম? পুলিশ-শিক্ষক
ধস্তাধস্তিতে প্রধান অতিথি উত্তেজনা। এক ঢিলে দুই লোধা মেরে
গত পঞ্চাশ বছরের সেরা টেস্ট ইনিংস হল কব্‌জ-হার!
চার্জশিটে ধস নেমে সমস্ত বাঙালি ভূমিকম্পপ্রবণ!
বিকল্প বিকল্পের খোঁজে জঙ্গি হেলিকপ্টারও নেমে গেছে। পশ্চিমবঙ্গের
অর্থনীতির গালে চড় মেরেছে মিরিকের কুয়াশা। আর ভারত-পাক
আলোচনা নিয়ে পাটিসাপ্‌টা বানালো সকালের ন্যাপকিন
আমার মুন্ডুছেদের ছবি গতকালের টুইটারে পাঠাব

ভালো, সুপ্রচুর

ভালো, সুপ্রচুর
ভালো ছাড়া কিছু থাকে না, সুপ্রচুর ছাড়া
সাতাশি বছর হয়তো গাছ রক্ষা পাবে
সাইকেলের সামনে বসিয়ে মেয়েকে ফেরত আনা স্কুল থেকে
নদী-আদলের এক শাপমোচন দৃশ্য হতে পারে
অথচ যথেষ্ট ছাড়া জলও ফতুর
তার ভিজে শিরদাঁড়া পড়ে থাকে...
আমি সহজ-বন্দনা করি
কিন্তু এ-সহজ কতটা উদ্যত?
অচেনা পল্লী থেকে আসে ট্রাক
শুধু এই জন্মান্তর থেকে আসতে থাকা...
শুধু ওই মহাকাশ-সন্তানেরা দূরের দুপাশে
আর, নিচে আমাদের অনুরোধের আসর থেকে যায়

আলো এসেছেন

আলো এসেছেন
এক
আকাশে আজান দিচ্ছে তিন-স্তর মেঘের পঞ্চায়েত
মাঝে মাঝে সূর্যডানা-শোনপাপড়ি একটু ভেঙে মুখে।
নিচে মাটির আদর্শলিপি মেলে রাখা, তার
হলুদপাতা আখর হলে শুকনো ডাল দাঁড়ির সমান
আলো আসবেন
যে কালী-সাধিয়ে শনি-শনিবার হাটে লটারির টিকিট বিক্কিরি
পাগল যে নিকট-পাথর, জনস্রোত যাকে টলিয়ে প্রবাহ করেনি
সব্বাই ইচ্ছের করোটি পেতে আছে
উঠন্ত ভোরের পিঠে কেন হে বিঁধে আছো শাল-পলাশ!
শালিখ কখন চড়ুইভাতি করতে নামবে পৃথিবীতে?
এই কুয়াশা মুখ্যসচিব, আগে পৌঁছে নিরাপত্তা দেখতে হিমশিম
বাতাসের শ্বেত মর্মরে এক-চুল ফাট লাগিয়ে
জলপ্রপাতের গিট্টি খুলে দিয়ে
চেয়ার গ্রহণ করবেন আলো --- প্রধান অতিথি
ডোঙা বানিয়েছে বাঁশপাতা আলোর সিন্নি নেবে লে
মানুষেরা সন্তান বুনেছে...
দুই
দ্যুতির বিমান নেমে আসে
পিঠ আঁকড়ে বসে আছে হাওয়া
মাঝ্রাস্তায় বৃষ্টির ছড় ওকে টেনে বাজাবে খুব?
মাটিরও কাঠের হাত উঁচু উঁচূ গাছ-ফুল ধরে আছে
রানওয়েতে নেমে পাইলট খুললেন গতরাতের হালকা মুনগ্লাস
আমরা দেখি, আলো দৃষ্টিহীন
তিন
ছং করে সাইকেলের ঘন্টি এলো
ভোরের প্রথম সুর দুধের গোয়ালা
রাজমিস্ত্রি খৈনি বানায়
ডানহাতের চুটকিতে ভোরের ত্রিতাল
তারপর মুখে পান, ডাবউলির সাথে ক্যাসেটওলার লটঘটের ওপরে
কোঁচা দুলিয়ে বসেছেন তিনি --- ফুটপাথিয়া আলো
যখন চা-বাগানের ওপর বইছেন...জাতীয় আয়
মেঘের ভেতরের আসা-যাওয়া, তখন দামিনী
এই যে ভস্মে ঢাকা লোহা-কারখানা 
এই যে পাইকারের মাথায় হাত
সব পরিচিত সমাধির গায়ে সমধিক বেঁকে পড়েছে আলো
মর্মমূলে গিয়ে বিঁধছে। মর্মশিমূল উড়ে যাচ্ছে
প্রবাহে, পবনে...
চার
আলোর গায়ের মধ্যে হরিণের ডাক বসে থাকে
দীপ্তির ভেতরে যে রাংচিতার বেড়া বোনা ---
ছাগপুষ্প মাথায় ফুটেছে
আলো যাবে ভৈরব নদ পর্যন্ত বাংলাদেশ...
রাত্রি ভেঙে যত হাই ওঠে, সম্পর্ক-ফাটল দিয়ে
নিষ্ক্রমণ হয়ে যারা বসে থাকে চা-হীন 
দাড়িকামানো-হীন ঝুল বারান্দায়
তাদেরও একটা নূর কোথাও উঠেছে
সেই আহা-আলো একস্থানে জড়ো করছে সমস্ত শরীর
সেলাইয়ে বাঁধছে তাকে --- ওস্তাগর
মলমপট্টি করে দিচ্ছে --- কম্পাউন্ডারবাবু
তাতেও যদি না পোষ মানে তবে সদগতি উপায় হবে
আলো ডোম, অগ্নিসহকারী
পাঁচ
আবার ফিরেছ তুমি
চূড়া যত উঁচু, রাধিকার মতো, তারও বুকের ওপর থেকে
সরে গেছ
নিচে মোটরবাইক রাস্তাটি জীবন্ত করে
নিচে আটপৌরে মেয়ে তোমার স্বপক্ষে তার লড়াই বাঁচাতে
ছোট দিয়াড়ি জ্বালায়
আকাশের সূর্যক্ষত চন্দ্রক্ষত দিয়ে ছিটকে নেমেছিলে
রক্তাক্ত তরল
তবু যৌনসময়ের মতো হঠাৎ কঠিন হয়ে
ভেদ করেছ কত যে শরীর
তুলে নিয়ে রওনা হচ্ছো, যেভাবে সন্ধেয়
জিৎতাল খেলে পকেটের মার্বেল বাজাতে বাজাতে
হৃষ্ট বাচ্চা বাড়ি ফেরে
ছয়
প্রতিদিন সন্ধেবেলা। তোমাকে রিকশায় তুলি অবিভক্ত জাহান- দাঁড়িয়ে
তুমি দুবার মুখ ঘোরাও --- কোনও শীষ ভুল করে 
থেকে যাচ্ছে না তো!
রিকশা বাতাসে ওঠে, চারপাশে ঘরমুখো পাখির ফোয়ারা
শূন্যের মস্তিষ্ক থেকে তীক্ষ্ণবুদ্ধি নেমে এসেছিলে
আট পা মাটিতে গাঁথা কালো রে,
কালোও একটা সমুজ্জ্বল
আমরা গো যুক্ত এষণা করেছি, কী কী দিয়ে গঠন গো তুমি!
একশো গ্রাম মতো মুড়কি, আট আনার বুটছোলা দিয়ে?
তোমার গা থেকে ডালে মেথি সম্বর দেওয়ার 
গন্ধ ওঠে কেন!
গায়ে তোমার ভাঙা রাস্তা, সাইকেলের অবস্থা-খারাপ শব্দ পাই
কী হয় যদি পড়ে না যাও বিকেলবেলার জানলা-খোলা থেকে?
সবাই যাওয়ার ধুলো ওড়ায় যে পথ, তাকে 
গৌরবর্ণ আড়ি দেখিয়ে দাও!
থাকো না আলো, এই রকম পৃথিবীপাড়ায় --- সাপের ভিটে
হাটবাজারে আমাকে ফেলে ফিরতে ত্তোমার বিবেকে কাটে না!

তুমি জানো না...তুমি হয়তো জানো...তুমি তো জানোই
আমার সমস্ত শব্দে সেই কবে আলোকবিভক্তি বসে গেছে