Friday, 28 December 2012
Tuesday, 25 December 2012
Saturday, 22 December 2012
ভুবনভোজন চলছে ("ভুবনভোজন চলছে" ) বইয়ের কবিতা
ভুবনভোজন চলছে
চন্দন ভট্টাচার্য
এক
"না না, রাস দেখতে যাচ্ছি না গ'
শালির বিয়েতে যাচ্ছি
ধান্যসরা শ্বশুরঘর, সেটি জানা নাই কি !
আমার তো বেস্পতিবারের আগে ফিরতি হবে না
বড় জামাই, ছাড়বে ক্যানে?"
বাসের সামনের সিটে জুলপিভরা গর্ব বসে আছে
দুপাশে পুকুরের মেগা-সিরিয়ালে বৃষ্টির সিঙাড়া ফুটিফুটি --- দেখে
গাছগুলো পালক-কলম, মাটিতে মুখ গুঁজে সাহী খুঁজছে রে !
তার মধ্যে মাঠের উঠোনে রঙিন
নতুন
উপুড়
নৌকোচোখ
ওকে কেউ স্রোতে সম্প্রদান ক'রে আসবে না ?
দুই
বাস আজ শহরে ঢুকবে না
টাটকা রাস লেগে গেছে
"বসে থাকো, বাড়ি বাড়ি নামিয়ে আসবেখ'ন"
ওমা কী হাসির কথা, কিন্তু ছোটোভাই কেঁদে যাচ্ছে
সিটে বসবে, কোলে টানলে মাথা ফাটাফাটি !
ভিড় ঝাঁকুনির মাঝখানে অচেনা বুকের স্তন
পিঠ ঘ'ষটে নেমে গেলে
বাচ্চাগুলো কার, সামলাও --- কন্ডাকটার চেঁচাল
"সে কী, পেছনে ওয়ান টু লেখা নেই ! তিন নম্বরটা আমাদের"
বাসের পেছনের সিটে ইয়ারকি বসেছে হেসে কুটিকুটি বউ নিয়ে
তিন
রঙিন মুকুর পোঁতা মাটিতে
ধুলো-ময়দান। তাতে একটা সিদ্ধিবট মানে
গোটা গ্রামের রাখালি
গেঁয়ো নদীটাকে নায়িকা নামিয়ে পুরো মাঠচাষের সিনেমা
জন্ম জন্ম ধ'রে প্রেমজল সেবা-হাত নিয়ে খেলা ক'রে তারপর
বটের একটা ডাল ভাঙতেই ভেদবমি হল
ধু ধু একা মন্দিরচুড়ো টুসকি দিলে ছুটে এল
ধুতি-শাড়ির হাসিমুখ শকহূণদল....
মাটির ওপর ওমনি উঠে বসেছে আরশি, তাতে রোদ লেগে
সর্বত্র দেয়ালা
চার
তুমি বৃক্ষ, এখন কলপ মেখে শিশুগাছ
টাটকা বসন্ত হ'লে চুড়োখানা
সরবতিলেবুরঙ লেডিসের ছাতা
সামনের দু'পা ভাঁজ ক'রে ব'সে
হাতিশুঁড় বটগাছ দিবাকর পিঠে তুলেছ
নিচে ধুলোঝাঁট পেতে আমাদের একটা নিকোনো পুজো
কপালের জল, চোখের ঘর্মাক্ত দিয়ে তরিজুত করা।
ছোট বারকোশে কাটা পড়ছে ফল,
তার পেছনে উদ্দাম থালায় আলুকুমড়ো ডুমো ডুমো
সে-পশ্চাৎ ডেগ হাঁড়ি
কবেকার আড়য়াল খাঁয়ে লগি ঠেলছ, গুরুভাই
পাঁচ
বাংলার সব উজাড় মন্দিরের মতো তোমারও বিগ্রহ চুরি গেছে
কোন পাথর-ঠান্ডা টুঙ্গিতে বসে আছেন কষ্টিপাথর !
নিত্যসেবা বন্ধ। আর নববস্ত্র পরিধান?
স্নানই হচ্ছে না তার নববস্তর ! রাত পর্যন্ত ড্রয়িংরুমে আলো, মদের হুল্লোড়ে
কী ক'রে শোকেসের মধ্যে শয়নে যান নেতাই?
বাংলার সব শ্রীপাটের মধ্যে আমরা তবু জাগিয়েছি মহাভাব
ষোলো বছরের ভদ্রাণীর লালপাড় সাদা শাড়িতে
চার ঘন্টা কীর্তননের দম জাগিয়ে রেখেছি
আর ভিখারিকে জড়িয়ে ধ'রে সে কী কান্না, কী ক্ষমাপ্রার্থনা
পথের বৈষ্ণবী --- তার তিলকমাটি কপালে নিয়েই ওমনি ঢিপিস ক'রে....
বিগ্রহ করেছি প্রতি মুখ
ছয়
সে মঠ গৌড়ীয়। লঙ্গরখানা খুলে
খোলে-করতালে দু'তিন দফা শান দেয়
চবুতরায় ব'সে শুয়ে আধা বেশ্যা, আধা বৈষ্ণবী
(পাগলও আছে, বলতে হবে কৃষ্ণপাগল)
তবু পেচ্ছাপখানাটি শান্ত, জোড়া তুলসি জোড়া তুলসি
বুনো তুলসির বনে
একটা হা-হতোস্মি বকুল, মরেও মরছে না তেঁই ফুলসন্তানপাত
সাত
আমি যে জীবন --- তা-ই করজোড় পাওয়ার যোগ্যতা
আমি যে পিপাসি, ওগো, সে-ই ব্রহ্মধূপ !
কোঁচড়ভর্তি পড়ল ফুলরেণু এই ঝুরো চিঁড়ে ভারিক্কি মুড়কি
তিনটে আখড়া না ঘুরতেই আমি পোয়াতি আটমাস
ধুলোআসন ক'রে বসলে? তবে মাথা বাঁচাও মাথা বাঁচাও
দুধবর্ষা হবে
মুড়িচুড়ায়
আমরা যারা চেয়েচিন্তে উপবাস
আসি আর সামদাম পেট নিয়ে ঘুম বটতলে ।
উঠে ফের জ্যামিতি-স্কেলের মতো, স্কুলের পিটির মতো.....
ভুবনভোজন চলছে
আট
আহা, কোন ছোটকালে মা গেছে?
আহা, তাই বয়স্ক দেখলেই মা মা করে বুকের মঝধার ?
আমার ছেলেটি বড় ভালো, জানো?
মিলেমিশে থাকি, বৌয়ের চুলে তেল মাখিয়ে
সেই হাত মাথায় মুছে ঘাটে চলে যাই
ওই ওনার পাঁচটি, কেউ ভাত দিতে অরাজি
আহা, কোনও কান সোনা পায় না
আবার কোনও সোনা কান ....
নয়
শাল পাতায় ডাবু হাতায় খিচুড়ি ঢাললাম
কিছু মাটি খাচ্ছে, কিছু তুমি
পেছনে কুকুর (দেখো, তার ওপরে ব'সো না)
পেছনের উঁচুনিচু ভুঁয়ে সনাক্ত হলুদ পায়খানা
থোড়া-সা অরণ্যমতো, পুকুরের সৌপ্রাচীন ঘাট
জয় রাধে --- সক্কল এঁটো হাত জলতরঙ্গ দিল
এক-ক্যামেরা ছবি ওঠে মাড়-শনশন রুমালে ঠোঁটমোছা
ছবি হয় বিড়ি মুখে প্রধান সূপকার
দশ
এই যে অভুক্ত আমি, দ্বিপ্রহর ঢ'লে গেলে তবুও যে আহার্য পেলাম, এবং যে-সে দানাপানি নয়, অন্তিম ভোগান্নটি, আর সেই নিবেদন পরম চৈতন্যসখা অদ্বৈতাচার্যের , আমার এ-সৌভাগ্য আমি কল্পনায়ও আনতে কুন্ঠিত। কেন না, কতদূর থেকে ভোরে বাসি মুখে ঘর ছেড়ে তিন বার বাস পালটিয়ে এবং এ-হেন মন্দিরে সকাল সকাল না এলে না পূর্বভাগে ব'লে রাখলে সংস্থান থাকে না, শ্রীমৎ অদ্বৈতের পরম মহিমা-বলে পূজারী অন্নাহার থাকলেও দেবেন না সকলকে, তদুপরি হা-প্রত্যাশায় বেলা যায়, কেননা প্রসাদ শেষ না হলে তিনি সেবায় বসতে পারছেন কই?
এভাবে ভাঙা দেউলের মেঝেয় আমি থেবড়ে বসি, রেওয়াজটি বৃন্দাবনসম। এই নবদ্বীপের প্রতি ধূলিকণায় তিনি রয়েছেন মহাপ্রভু, কোন ধুলো সরিয়ে তুমি আসন পাততে চাও রে পাগল ! বেরঙা দেওয়ালের জীর্ণতার মধ্যে চোখ থাকলে আমি তদরূপ দেখতে পাবো, দলা দলা আতপ ভাতের গোগ্রাস পাবো কলাপাতায় চল্লিশ টাকার কুশলতা। দুই কুমড়োভাজা-কালোর ডান দিকে বসেছেন শীর্ণ লম্বা নাকটি-ছাড়া-কিছু-নেই সে-ব্রাহ্মণ, বাঁয়ে এয়োস্ত্রী যেন ভাতের মধ্যে তুলোসিপাতাগুচ্ছ --- খাও বাবা ওইটিই তো আসল পেসসাদ। কলকল ডাল বইলো, অদ্বৈতের মুলোছেঁচকি তেঁতুলের চাটনি ঘি-পায়েস পুরুত ঠাকুরের ভুঁড়ির অনেক নিচে গরদের ফাঁস সব কলাপাতায় মুড়ে যেই.... দেয়ালের আড়ালে দেখি মাগনা বড় হাজরি নিচ্ছেন জয়
আমার রোগা রিকশাওলা ভাইয়ের জয়!
এগারো
সন্ধে হল। পাথর এখনও তপ্ত। ঠাকুর, নেবো কি?
সকলেই সংগ্রহে এসেছে।
আমি ভুলিতে পারি না সেই ব্রহ্মময়ী রাই ...
বারো
গাছে ফুল নেই, ফুল তুলিবেন না। ইহা গৌড়ের মধ্যে সর্বাপেক্ষা প্রাচীন মুসলমান কীর্তি। বারোটি দ্বারপথ, এই ধারণায় সম্ভবত নাম বারোদুয়ারি। রাধারাণী বলছেন, ও-গোবিন্দ, বলো তো মানুষ এত কষ্ট করে কেন? এই যে চতুর্লক্ষ ভিড়, এখানে পায়খানা, এখানেই চুল আঁচড়ানো। ইহা সুলতান নসরত শাহের অমর স্থাপন। বাচ্চাগুলোর মুখে ডুমো মাছি বসছে, তুমি এখানে থেকো না। আমার হৃদয়মাঝে বিচিত্র পালঙ্ক আছে, আশেপাশে রসের বালিশ। এবার খোল উঠে দাঁড়াল, দক্ষিণপূর্ব ভাগেও দুলছে একটি অক্ষয় পীঠ, সম্ভবত ইহা মুয়াজ্জিম নমাজের সময় ব্যবহার করিতেন। সেই মাঠে অজস্র বৈষ্ণব প্লাস্টিক পেতে আম খায়। আর মা নন্দরানী, তিনি? তিনি আজ গোপালের আরতি করবেন। হ্যালো চেক। আমাদের মায়েরা বাবারা ভায়েরা বোনেরা .....বাউন্ডারিতে পেচ্ছাপ উবু হলে আমিও উলুধ্বনি ---- চায়ের প্যাকেট, ব্যাটফেদার, কানের মাকড়ি, টাইটানিক দশ টাকা দশ টাকা দশ টাকা। এইমাত্র একজন ভক্ত একশোর একটি নোট দিলেন ; তাহাতে শুইবা তুমি, চরণ চাপিব আমি, ঘুচে যাবে মনের আলিস। আমি কাউকে কষ্ট করতে বলিনি গো রাধা। আপন সহজে মিলে। ধন্যবাদ।
পর কভু মিলে না।
তেরো
রোগা কুব্জ ধুতি-চাদর-উড়নির ত্রিলাল কাপালিক
মাথায় চাঁদের রিপেয়ার-করা খিলান নিয়ে ঘাসমাঠ পার হয়ে গেল
তাবিজ-মোড়া কচি বটপাতা, সোনালি কাঁটা কাঁটায়
জাগ্রত ক'রে দিচ্ছে এ-শরীর অষ্টধাতুর। তাছাড়া খোল সারাই, খোল বিক্কিরি।
শিতলপাটি মাসির কাছে বড় হাই ছোট আব্বুলিশগুলো
গুটিয়ে থিয়ে করা দেখে বলছি ---
মেলার শেষ রাতটুকু ওই কোলে মাথা দিয়ে....?
"ঘুমায়ো"
চন্দন ভট্টাচার্য
এক
"না না, রাস দেখতে যাচ্ছি না গ'
শালির বিয়েতে যাচ্ছি
ধান্যসরা শ্বশুরঘর, সেটি জানা নাই কি !
আমার তো বেস্পতিবারের আগে ফিরতি হবে না
বড় জামাই, ছাড়বে ক্যানে?"
বাসের সামনের সিটে জুলপিভরা গর্ব বসে আছে
দুপাশে পুকুরের মেগা-সিরিয়ালে বৃষ্টির সিঙাড়া ফুটিফুটি --- দেখে
গাছগুলো পালক-কলম, মাটিতে মুখ গুঁজে সাহী খুঁজছে রে !
তার মধ্যে মাঠের উঠোনে রঙিন
নতুন
উপুড়
নৌকোচোখ
ওকে কেউ স্রোতে সম্প্রদান ক'রে আসবে না ?
দুই
বাস আজ শহরে ঢুকবে না
টাটকা রাস লেগে গেছে
"বসে থাকো, বাড়ি বাড়ি নামিয়ে আসবেখ'ন"
ওমা কী হাসির কথা, কিন্তু ছোটোভাই কেঁদে যাচ্ছে
সিটে বসবে, কোলে টানলে মাথা ফাটাফাটি !
ভিড় ঝাঁকুনির মাঝখানে অচেনা বুকের স্তন
পিঠ ঘ'ষটে নেমে গেলে
বাচ্চাগুলো কার, সামলাও --- কন্ডাকটার চেঁচাল
"সে কী, পেছনে ওয়ান টু লেখা নেই ! তিন নম্বরটা আমাদের"
বাসের পেছনের সিটে ইয়ারকি বসেছে হেসে কুটিকুটি বউ নিয়ে
তিন
রঙিন মুকুর পোঁতা মাটিতে
ধুলো-ময়দান। তাতে একটা সিদ্ধিবট মানে
গোটা গ্রামের রাখালি
গেঁয়ো নদীটাকে নায়িকা নামিয়ে পুরো মাঠচাষের সিনেমা
জন্ম জন্ম ধ'রে প্রেমজল সেবা-হাত নিয়ে খেলা ক'রে তারপর
বটের একটা ডাল ভাঙতেই ভেদবমি হল
ধু ধু একা মন্দিরচুড়ো টুসকি দিলে ছুটে এল
ধুতি-শাড়ির হাসিমুখ শকহূণদল....
মাটির ওপর ওমনি উঠে বসেছে আরশি, তাতে রোদ লেগে
সর্বত্র দেয়ালা
চার
তুমি বৃক্ষ, এখন কলপ মেখে শিশুগাছ
টাটকা বসন্ত হ'লে চুড়োখানা
সরবতিলেবুরঙ লেডিসের ছাতা
সামনের দু'পা ভাঁজ ক'রে ব'সে
হাতিশুঁড় বটগাছ দিবাকর পিঠে তুলেছ
নিচে ধুলোঝাঁট পেতে আমাদের একটা নিকোনো পুজো
কপালের জল, চোখের ঘর্মাক্ত দিয়ে তরিজুত করা।
ছোট বারকোশে কাটা পড়ছে ফল,
তার পেছনে উদ্দাম থালায় আলুকুমড়ো ডুমো ডুমো
সে-পশ্চাৎ ডেগ হাঁড়ি
কবেকার আড়য়াল খাঁয়ে লগি ঠেলছ, গুরুভাই
পাঁচ
বাংলার সব উজাড় মন্দিরের মতো তোমারও বিগ্রহ চুরি গেছে
কোন পাথর-ঠান্ডা টুঙ্গিতে বসে আছেন কষ্টিপাথর !
নিত্যসেবা বন্ধ। আর নববস্ত্র পরিধান?
স্নানই হচ্ছে না তার নববস্তর ! রাত পর্যন্ত ড্রয়িংরুমে আলো, মদের হুল্লোড়ে
কী ক'রে শোকেসের মধ্যে শয়নে যান নেতাই?
বাংলার সব শ্রীপাটের মধ্যে আমরা তবু জাগিয়েছি মহাভাব
ষোলো বছরের ভদ্রাণীর লালপাড় সাদা শাড়িতে
চার ঘন্টা কীর্তননের দম জাগিয়ে রেখেছি
আর ভিখারিকে জড়িয়ে ধ'রে সে কী কান্না, কী ক্ষমাপ্রার্থনা
পথের বৈষ্ণবী --- তার তিলকমাটি কপালে নিয়েই ওমনি ঢিপিস ক'রে....
বিগ্রহ করেছি প্রতি মুখ
ছয়
সে মঠ গৌড়ীয়। লঙ্গরখানা খুলে
খোলে-করতালে দু'তিন দফা শান দেয়
চবুতরায় ব'সে শুয়ে আধা বেশ্যা, আধা বৈষ্ণবী
(পাগলও আছে, বলতে হবে কৃষ্ণপাগল)
তবু পেচ্ছাপখানাটি শান্ত, জোড়া তুলসি জোড়া তুলসি
বুনো তুলসির বনে
একটা হা-হতোস্মি বকুল, মরেও মরছে না তেঁই ফুলসন্তানপাত
সাত
আমি যে জীবন --- তা-ই করজোড় পাওয়ার যোগ্যতা
আমি যে পিপাসি, ওগো, সে-ই ব্রহ্মধূপ !
কোঁচড়ভর্তি পড়ল ফুলরেণু এই ঝুরো চিঁড়ে ভারিক্কি মুড়কি
তিনটে আখড়া না ঘুরতেই আমি পোয়াতি আটমাস
ধুলোআসন ক'রে বসলে? তবে মাথা বাঁচাও মাথা বাঁচাও
দুধবর্ষা হবে
মুড়িচুড়ায়
আমরা যারা চেয়েচিন্তে উপবাস
আসি আর সামদাম পেট নিয়ে ঘুম বটতলে ।
উঠে ফের জ্যামিতি-স্কেলের মতো, স্কুলের পিটির মতো.....
ভুবনভোজন চলছে
আট
আহা, কোন ছোটকালে মা গেছে?
আহা, তাই বয়স্ক দেখলেই মা মা করে বুকের মঝধার ?
আমার ছেলেটি বড় ভালো, জানো?
মিলেমিশে থাকি, বৌয়ের চুলে তেল মাখিয়ে
সেই হাত মাথায় মুছে ঘাটে চলে যাই
ওই ওনার পাঁচটি, কেউ ভাত দিতে অরাজি
আহা, কোনও কান সোনা পায় না
আবার কোনও সোনা কান ....
নয়
শাল পাতায় ডাবু হাতায় খিচুড়ি ঢাললাম
কিছু মাটি খাচ্ছে, কিছু তুমি
পেছনে কুকুর (দেখো, তার ওপরে ব'সো না)
পেছনের উঁচুনিচু ভুঁয়ে সনাক্ত হলুদ পায়খানা
থোড়া-সা অরণ্যমতো, পুকুরের সৌপ্রাচীন ঘাট
জয় রাধে --- সক্কল এঁটো হাত জলতরঙ্গ দিল
এক-ক্যামেরা ছবি ওঠে মাড়-শনশন রুমালে ঠোঁটমোছা
ছবি হয় বিড়ি মুখে প্রধান সূপকার
দশ
এই যে অভুক্ত আমি, দ্বিপ্রহর ঢ'লে গেলে তবুও যে আহার্য পেলাম, এবং যে-সে দানাপানি নয়, অন্তিম ভোগান্নটি, আর সেই নিবেদন পরম চৈতন্যসখা অদ্বৈতাচার্যের , আমার এ-সৌভাগ্য আমি কল্পনায়ও আনতে কুন্ঠিত। কেন না, কতদূর থেকে ভোরে বাসি মুখে ঘর ছেড়ে তিন বার বাস পালটিয়ে এবং এ-হেন মন্দিরে সকাল সকাল না এলে না পূর্বভাগে ব'লে রাখলে সংস্থান থাকে না, শ্রীমৎ অদ্বৈতের পরম মহিমা-বলে পূজারী অন্নাহার থাকলেও দেবেন না সকলকে, তদুপরি হা-প্রত্যাশায় বেলা যায়, কেননা প্রসাদ শেষ না হলে তিনি সেবায় বসতে পারছেন কই?
এভাবে ভাঙা দেউলের মেঝেয় আমি থেবড়ে বসি, রেওয়াজটি বৃন্দাবনসম। এই নবদ্বীপের প্রতি ধূলিকণায় তিনি রয়েছেন মহাপ্রভু, কোন ধুলো সরিয়ে তুমি আসন পাততে চাও রে পাগল ! বেরঙা দেওয়ালের জীর্ণতার মধ্যে চোখ থাকলে আমি তদরূপ দেখতে পাবো, দলা দলা আতপ ভাতের গোগ্রাস পাবো কলাপাতায় চল্লিশ টাকার কুশলতা। দুই কুমড়োভাজা-কালোর ডান দিকে বসেছেন শীর্ণ লম্বা নাকটি-ছাড়া-কিছু-নেই সে-ব্রাহ্মণ, বাঁয়ে এয়োস্ত্রী যেন ভাতের মধ্যে তুলোসিপাতাগুচ্ছ --- খাও বাবা ওইটিই তো আসল পেসসাদ। কলকল ডাল বইলো, অদ্বৈতের মুলোছেঁচকি তেঁতুলের চাটনি ঘি-পায়েস পুরুত ঠাকুরের ভুঁড়ির অনেক নিচে গরদের ফাঁস সব কলাপাতায় মুড়ে যেই.... দেয়ালের আড়ালে দেখি মাগনা বড় হাজরি নিচ্ছেন জয়
আমার রোগা রিকশাওলা ভাইয়ের জয়!
এগারো
সন্ধে হল। পাথর এখনও তপ্ত। ঠাকুর, নেবো কি?
সকলেই সংগ্রহে এসেছে।
আমি ভুলিতে পারি না সেই ব্রহ্মময়ী রাই ...
বারো
গাছে ফুল নেই, ফুল তুলিবেন না। ইহা গৌড়ের মধ্যে সর্বাপেক্ষা প্রাচীন মুসলমান কীর্তি। বারোটি দ্বারপথ, এই ধারণায় সম্ভবত নাম বারোদুয়ারি। রাধারাণী বলছেন, ও-গোবিন্দ, বলো তো মানুষ এত কষ্ট করে কেন? এই যে চতুর্লক্ষ ভিড়, এখানে পায়খানা, এখানেই চুল আঁচড়ানো। ইহা সুলতান নসরত শাহের অমর স্থাপন। বাচ্চাগুলোর মুখে ডুমো মাছি বসছে, তুমি এখানে থেকো না। আমার হৃদয়মাঝে বিচিত্র পালঙ্ক আছে, আশেপাশে রসের বালিশ। এবার খোল উঠে দাঁড়াল, দক্ষিণপূর্ব ভাগেও দুলছে একটি অক্ষয় পীঠ, সম্ভবত ইহা মুয়াজ্জিম নমাজের সময় ব্যবহার করিতেন। সেই মাঠে অজস্র বৈষ্ণব প্লাস্টিক পেতে আম খায়। আর মা নন্দরানী, তিনি? তিনি আজ গোপালের আরতি করবেন। হ্যালো চেক। আমাদের মায়েরা বাবারা ভায়েরা বোনেরা .....বাউন্ডারিতে পেচ্ছাপ উবু হলে আমিও উলুধ্বনি ---- চায়ের প্যাকেট, ব্যাটফেদার, কানের মাকড়ি, টাইটানিক দশ টাকা দশ টাকা দশ টাকা। এইমাত্র একজন ভক্ত একশোর একটি নোট দিলেন ; তাহাতে শুইবা তুমি, চরণ চাপিব আমি, ঘুচে যাবে মনের আলিস। আমি কাউকে কষ্ট করতে বলিনি গো রাধা। আপন সহজে মিলে। ধন্যবাদ।
পর কভু মিলে না।
তেরো
রোগা কুব্জ ধুতি-চাদর-উড়নির ত্রিলাল কাপালিক
মাথায় চাঁদের রিপেয়ার-করা খিলান নিয়ে ঘাসমাঠ পার হয়ে গেল
তাবিজ-মোড়া কচি বটপাতা, সোনালি কাঁটা কাঁটায়
জাগ্রত ক'রে দিচ্ছে এ-শরীর অষ্টধাতুর। তাছাড়া খোল সারাই, খোল বিক্কিরি।
শিতলপাটি মাসির কাছে বড় হাই ছোট আব্বুলিশগুলো
গুটিয়ে থিয়ে করা দেখে বলছি ---
মেলার শেষ রাতটুকু ওই কোলে মাথা দিয়ে....?
"ঘুমায়ো"
Friday, 21 December 2012
শেষ ওভার ("জাতকের কবিতা" বইয়ের কবিতা)
শেষ ওভার
চন্দন ভট্টাচার্য
আমি বলেছি, এই যে শোনো
একটা মাথা-ঠান্ডা প্রশ্ন করি
যদি কেউ স্কুলেই যায় সকাল সকাল, দোষের মধ্যে শুধু
তোমাকে-তাকিয়ে একদৃষ্টে পথ হাঁটে
তবে সেই কুচকাওয়াজকে "ভীষণ পছন্দ" বলা যাবে?
ধরো, একদিন তুমি অন্ধকার; জলকাদায় ডুবে
বাড়ি ফিরছ আর লুকিয়ে কেউ টর্চ দেখাচ্ছে উঠোন পর্যন্ত ধন্যবাদ,
তবে তার ঘটনাকে "মানসিক দুর্বলতা" নাম দেওয়া যায়?
আমি বলেছি, শোনোই না
তুমি আচমকা রেল স্টেশনে দাঁড়িয়ে; সেই যে "কেউ",
তার দাদা এসে পিঠে ধাপ্পা দিচ্ছে, বলছে
রেজাল্ট খারাপ হয়েছে তো কী?
ব্যাঙ্কের ক্লার্কশিপ তুই আরামসে পেয়ে যাবি জানি,
আমি স--ব জানি.....
তবে তুমি শেষ ওভারে মাত্র একটা রান বাকি-তে ভয় পাবে ?
তখনও কী ভাববে গো, ভেবে মুছে ফেলবে
কপালে সদ্য ওঠা তৃতীয় নয়ন !
আমি তোমাকে এই অর্থহীন প্রয়োজনীয় কান্নামাখা প্রশ্নখানা করি
Thursday, 20 December 2012
সব জলপ্রপাতের মধ্যে তুমিই মহৎঃ এক ("জাতকের কবিতা")
সব জলপ্রপাতের মধ্যে তুমিই মহৎ
এক
তিলের নাড়ুর মতো
তিলের নাড়ুর মতো দুহাতের পাকে
মা কেবল ছোটো হয়ে আসে
দুর্দান্ত করবীগাছ
বীজের ভেতরে সেও লুকিয়ে যায় কোমর অবধি
তাকে মশারি টাঙিয়ে, তাকে ধামাচাপা দিয়ে
আমিই দুহাত তাস খেলতে বসেছি
বেলা শেষ, খেতে বসেছি কাঠটগর শিউলিবাটা দিয়ে
প্রতি গরাসের সাথে ওই হাত হয়ে উঠছে হাতপাখা
ওই গ্রীবা গতজন্মে গলায়-দড়ি মেয়ের মতো
লম্বা রাজহাঁস
মা উড়বেই....
আর আমি তক্ষুণি ঝাঁপিয়েছি বুকের ওপর
ও মা চোখ খোলো, কেন মাগো কথা বলছো না
এক
তিলের নাড়ুর মতো
তিলের নাড়ুর মতো দুহাতের পাকে
মা কেবল ছোটো হয়ে আসে
দুর্দান্ত করবীগাছ
বীজের ভেতরে সেও লুকিয়ে যায় কোমর অবধি
তাকে মশারি টাঙিয়ে, তাকে ধামাচাপা দিয়ে
আমিই দুহাত তাস খেলতে বসেছি
বেলা শেষ, খেতে বসেছি কাঠটগর শিউলিবাটা দিয়ে
প্রতি গরাসের সাথে ওই হাত হয়ে উঠছে হাতপাখা
ওই গ্রীবা গতজন্মে গলায়-দড়ি মেয়ের মতো
লম্বা রাজহাঁস
মা উড়বেই....
আর আমি তক্ষুণি ঝাঁপিয়েছি বুকের ওপর
ও মা চোখ খোলো, কেন মাগো কথা বলছো না
দুই যমজ তিন যমজ ("জাতকের কবিতা" বইয়ের কবিতা)
দুই যমজ তিন যমজ
চন্দন ভট্টাচার্য
লাল গেঞ্জির কাছে রেখে গেলাম আমার ঠিকানা
চেকারের বুক ঘেঁষে বেরিয়ে যাওয়া বিনা-টিকিট
আর ট্রেকারের গায়ে চড় মেরে "আর একজন ...
মদনপুর আর একজন"
সেই চিৎকার কাত হয়ে বাওড়ের মাঝখানে উলটে পড়েছে, আর সকালে
ভেসে ওঠা স্বামীমাছ কন্যামাছের গায়ে
লিখে দিলাম আমার ঠিকানা
যে-ছেলেরা কাশের গুচ্ছ বেঁধেছিল চায়ের দোকানে
তোমাদের রেখে গেলাম
যে-মেয়েরা ফিস ফিস কালো জলে ভরা
তোমাদের হাতে।
মুন্ডু-মুন্ডু সব মাথা এই নিহত এগারো আর আহত উনিশে ধরা আছে
নিহত সবার জন্যে চা আসছে, আহত কলকব্জাগুলো
খ'সে খ'সে গিয়ে লেগেছে
মুরগির দু'হাত দু'পায়
পোষাক-ছাড়ানো মুরগিরা --- তোমরা আমার গর্ভজাত;
মরা পিকনিক থেকে তোমাদের জন্মগুলো ফেরত এসেছে
এবং উড়েও যাচ্ছে আমার দুই যমজ তিন যমজ সুসন্তান....
ওড়ার দুপাশে নিরুদ্দেশ,
ওড়ার পায়ের হাড়ে যে গুমশুদা পাহাড় জন্মায়
তার ডানা থেকে মুছে দিলাম আমার ঠিকানা
চন্দন ভট্টাচার্য
লাল গেঞ্জির কাছে রেখে গেলাম আমার ঠিকানা
চেকারের বুক ঘেঁষে বেরিয়ে যাওয়া বিনা-টিকিট
আর ট্রেকারের গায়ে চড় মেরে "আর একজন ...
মদনপুর আর একজন"
সেই চিৎকার কাত হয়ে বাওড়ের মাঝখানে উলটে পড়েছে, আর সকালে
ভেসে ওঠা স্বামীমাছ কন্যামাছের গায়ে
লিখে দিলাম আমার ঠিকানা
যে-ছেলেরা কাশের গুচ্ছ বেঁধেছিল চায়ের দোকানে
তোমাদের রেখে গেলাম
যে-মেয়েরা ফিস ফিস কালো জলে ভরা
তোমাদের হাতে।
মুন্ডু-মুন্ডু সব মাথা এই নিহত এগারো আর আহত উনিশে ধরা আছে
নিহত সবার জন্যে চা আসছে, আহত কলকব্জাগুলো
খ'সে খ'সে গিয়ে লেগেছে
মুরগির দু'হাত দু'পায়
পোষাক-ছাড়ানো মুরগিরা --- তোমরা আমার গর্ভজাত;
মরা পিকনিক থেকে তোমাদের জন্মগুলো ফেরত এসেছে
এবং উড়েও যাচ্ছে আমার দুই যমজ তিন যমজ সুসন্তান....
ওড়ার দুপাশে নিরুদ্দেশ,
ওড়ার পায়ের হাড়ে যে গুমশুদা পাহাড় জন্মায়
তার ডানা থেকে মুছে দিলাম আমার ঠিকানা
Tuesday, 18 December 2012
রেজারেকশন ("তিনটি ডানার পাখি" বইয়ের উন্মেষ কবিতা)
রেজারেকশন
চন্দন ভট্টাচার্য
আমি যখন ফিরে এসেছি
চন্দন ভট্টাচার্য
আমি যখন ফিরে এসেছি
ফিরে এসো আকাশের সব অন্তর্গত !
"অপদার্থ" খেতাব পাওয়া শৈশব ঘুরে এসো
আর, তুমি রোদ, থেকে যাও, সূর্য যদি বা বাড়ি ফেরে
একটা রাত ঘুমোও, দোস্ত, যে প্রিয় সুপুরিগাছে
তোমার বঊনি হয় রোজ
তোমাকেও বলিহারি, এই সেদিন ভূমিষ্ঠ হয়ে
ওই অতোটা উতরে যাওয়া ছায়াগাছ
নেমে এসো সমান- সমান
হুড়োনাড়া চুল ধ'রে তোমাকে জোর কা
ঝটকা দিয়ে দিই
আমার তো আশাই ছিল না
তবু যখন চালু হল শরীরের সমস্ত নর্দমা
তার ভেতরে আবার কায়দা করে এগিয়ে চলল ময়লা জল
তখন পাকানো রুটির মধ্যে চিনি এসে থামো
ভাতের থালায় লাফ দিয়ে উঠে এসো
ও মেয়ে-বেড়াল
"অপদার্থ" খেতাব পাওয়া শৈশব ঘুরে এসো
আর, তুমি রোদ, থেকে যাও, সূর্য যদি বা বাড়ি ফেরে
একটা রাত ঘুমোও, দোস্ত, যে প্রিয় সুপুরিগাছে
তোমার বঊনি হয় রোজ
তোমাকেও বলিহারি, এই সেদিন ভূমিষ্ঠ হয়ে
ওই অতোটা উতরে যাওয়া ছায়াগাছ
নেমে এসো সমান- সমান
হুড়োনাড়া চুল ধ'রে তোমাকে জোর কা
ঝটকা দিয়ে দিই
আমার তো আশাই ছিল না
তবু যখন চালু হল শরীরের সমস্ত নর্দমা
তার ভেতরে আবার কায়দা করে এগিয়ে চলল ময়লা জল
তখন পাকানো রুটির মধ্যে চিনি এসে থামো
ভাতের থালায় লাফ দিয়ে উঠে এসো
ও মেয়ে-বেড়াল
Sunday, 2 December 2012
লাশফুল ফুটিয়েছোঃ সাত ("লাশফুল ফুটিয়েছো" বইয়ের কবিতা)
লাশফুল ফুটিয়েছো
সাত
চন্দন ভট্টাচার্য
হে রাজ্ঞী, আমি যা দেখেছি --- উচ্চারণ করা অনুচিত, কেননা মানুষ
তা বিশ্বাস করবে না। আমি কি জগৎবাসীকে জানাব, গ্রামের শরীর
উৎক্ষিপ্ত হয়েছে কাপাস তুলোর মতো, ছোট ছোট ধাতুর ফুৎকার সেই
দেহগুলোতে ছিদ্র করে দিচ্ছে। আমি কি ফাঁস করে দেব এই তথ্য যে
শ্রীমধুসূদনের হাতের টানে শিশুরা পায়ু-বরাবর দুফালি হয়ে যাচ্ছিল,
তারপর রাজাবাজারের কশাইবস্তিতে যেমন গোরুর মুন্ডু, কলজে, নাড়িভুঁড়ি
চপারে কেটে আলাদা আলাদা প্যাকিং হয়, তাদের ঠাসা হচ্ছিল
বস্তার মধ্যে। একের পর এক এলাকাদখল, সেখানে মারুতি থেকে
নামছেন ধৃষ্টকেতু, চেকিতান, কুন্তিভোজ ..... এর মধ্যে খবর ঃ কোনও
কোনও সাংবাদিক ঘটনাস্থলেই লুকিয়ে আছে। হল্লা উঠল, শালা সঞ্জয়
মিত্র যেন পালাতে না পারে। কুঁজো হয়ে ছুটতে ছুটতে দেখছিলাম
লাশের ঢিবি নিয়ে ট্রলার পাড়ি দিচ্ছে মোহনার দিকে, আর জলে তাজা
রক্তের গন্ধ পাওয়া ঝাঁক ঝাঁক হাঙর, কুমির, ঘড়িয়াল
উঠে এসেছে নদীতে, খালের মুখটায়। অয়ি পৃথা, ক্ষমা করবেন,
কেননা আমি আজও জানতে পারিনি এই দৃশ্য দুঃস্বপ্ন না বাস্তব যে
ধানখেতে আমার পায়ে জড়িয়ে যাচ্ছিল মেয়েদের মাথার চুল, টুকরো
অন্তর্বাস; এ-প্রশ্নও করবেন না, কেন আমি হোটেলের মেঝে
বেসিন বাথরুম কঠিন বমনে ভরিয়ে দিচ্ছিলাম এবং তা
থেকে ছিটকে বেরোচ্ছিল খণ্ড খণ্ড রক্তমহাভারত, শ্রী শ্রী গীতার কার্তুজ.......
সাত
চন্দন ভট্টাচার্য
হে রাজ্ঞী, আমি যা দেখেছি --- উচ্চারণ করা অনুচিত, কেননা মানুষ
তা বিশ্বাস করবে না। আমি কি জগৎবাসীকে জানাব, গ্রামের শরীর
উৎক্ষিপ্ত হয়েছে কাপাস তুলোর মতো, ছোট ছোট ধাতুর ফুৎকার সেই
দেহগুলোতে ছিদ্র করে দিচ্ছে। আমি কি ফাঁস করে দেব এই তথ্য যে
শ্রীমধুসূদনের হাতের টানে শিশুরা পায়ু-বরাবর দুফালি হয়ে যাচ্ছিল,
তারপর রাজাবাজারের কশাইবস্তিতে যেমন গোরুর মুন্ডু, কলজে, নাড়িভুঁড়ি
চপারে কেটে আলাদা আলাদা প্যাকিং হয়, তাদের ঠাসা হচ্ছিল
বস্তার মধ্যে। একের পর এক এলাকাদখল, সেখানে মারুতি থেকে
নামছেন ধৃষ্টকেতু, চেকিতান, কুন্তিভোজ ..... এর মধ্যে খবর ঃ কোনও
কোনও সাংবাদিক ঘটনাস্থলেই লুকিয়ে আছে। হল্লা উঠল, শালা সঞ্জয়
মিত্র যেন পালাতে না পারে। কুঁজো হয়ে ছুটতে ছুটতে দেখছিলাম
লাশের ঢিবি নিয়ে ট্রলার পাড়ি দিচ্ছে মোহনার দিকে, আর জলে তাজা
রক্তের গন্ধ পাওয়া ঝাঁক ঝাঁক হাঙর, কুমির, ঘড়িয়াল
উঠে এসেছে নদীতে, খালের মুখটায়। অয়ি পৃথা, ক্ষমা করবেন,
কেননা আমি আজও জানতে পারিনি এই দৃশ্য দুঃস্বপ্ন না বাস্তব যে
ধানখেতে আমার পায়ে জড়িয়ে যাচ্ছিল মেয়েদের মাথার চুল, টুকরো
অন্তর্বাস; এ-প্রশ্নও করবেন না, কেন আমি হোটেলের মেঝে
বেসিন বাথরুম কঠিন বমনে ভরিয়ে দিচ্ছিলাম এবং তা
থেকে ছিটকে বেরোচ্ছিল খণ্ড খণ্ড রক্তমহাভারত, শ্রী শ্রী গীতার কার্তুজ.......
লাশফুল ফুটিয়েছোঃ দুই ("লাশফুল ফুটিয়েছো" ব ইয়ের কবিতা)
লাশফুল ফুটিয়েছো
দুই
চন্দন ভট্টাচার্য
এখানে মাঠের মধ্যে মুখ-উপুড় এক-পা চপ্পল
ওখানে মাটির ঢেলা রক্ত খেয়ে ছটফটায়
এদিকে চমৎকার বলাৎকার রান্নাঘরে উনুনের পাশে
ওদিকে মর্গের নালা ভ'রে উঠছে কড়া লিকার চায়ে
এপাশে ব স্তার মধ্যে 'মাগো, জল দাও' ---এই
মহাপ্রাণ বর্ণমালা ফোটে
ওপাশে শান্তিআলোচনাগুলি ভেঙ্গে আমরা পেলাম
গুলি আর শান্তিআলোচনা
এখানে চোখের সামনে ভাই পড়ে যাচ্ছে, ভাই ওঠ,
তার ওঠার উৎসব নিবু নিবু
ওদিকে মানবহিংসা কোনও দিন মাটিতে মেশে না
দুই
চন্দন ভট্টাচার্য
এখানে মাঠের মধ্যে মুখ-উপুড় এক-পা চপ্পল
ওখানে মাটির ঢেলা রক্ত খেয়ে ছটফটায়
এদিকে চমৎকার বলাৎকার রান্নাঘরে উনুনের পাশে
ওদিকে মর্গের নালা ভ'রে উঠছে কড়া লিকার চায়ে
এপাশে ব স্তার মধ্যে 'মাগো, জল দাও' ---এই
মহাপ্রাণ বর্ণমালা ফোটে
ওপাশে শান্তিআলোচনাগুলি ভেঙ্গে আমরা পেলাম
গুলি আর শান্তিআলোচনা
এখানে চোখের সামনে ভাই পড়ে যাচ্ছে, ভাই ওঠ,
তার ওঠার উৎসব নিবু নিবু
ওদিকে মানবহিংসা কোনও দিন মাটিতে মেশে না
রবীন্দ্ররচনা বলি ("জগৎমঙ্গল কাব্য" বইয়ের কবিতা)
রবীন্দ্ররচনা বলি
চন্দন ভট্টাচার্য
আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে তুমি একটা কথা কিছুতেই
চন্দন ভট্টাচার্য
আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে তুমি একটা কথা কিছুতেই
শুনতে পাচ্ছো না উদাসীন যে তিন হাজার টাকার কমে
পাঁচ জনের সংসার চলে না। প্রণামীর খুচরোয় রোজকার
সবজি-বাজারটা হতো, হারামির হাতবাক্স বসিয়ে সে-ও
মন্দিরকমিটি খেয়ে গেছে
এদিকে গতবচ্ছর দিব্যি আকাশভরা সূর্যতারার মধ্যে বাবার স্ট্রোক
হয়ে গেল। পুঁজিপাটা খুইয়ে পাথুরিয়াঘাটায় মালিকের বাড়ি
গিয়েছি --- দেখি পাইকা হরফের ওপর গনেশের বাহন অধিষ্ঠান,
মালিক প্রেসের মেশিন বেচে ভাড়াটে বসাবে। ফিরে এসে তিন দিন
মুখ খুলি না, কোন আলোকে প্রাণের প্রদীপ জ্বালাবো ভেবে ভেবে
শুক্কুরবার সাইকেলে ফের দত্তবাড়ির নিত্যপুজোয় বেরিয়ে-তো-ছি,
এখন ডানহাতে বাবার প্যারালিসিস শালগ্রামশিলা আর বাঁহাতে
হ্যান্ডেল ধরলে ব্রেক নেই, বাকশক্তি থেকেও রহিত --- তা যা হবার
তা...... রাব্বারাব্বা অ্যাক্সিডেন্ট হবে
এই যে চোট লাগল, এর চেয়েও বড় শট খেয়েছি ছোটবেলায়
ইলেকট্রিকের কাজ করতে গিয়ে। কাল যখন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে টেনেহিঁচড়ে
আনছ তোমরা, তার মধ্যেই ভেবে নিলাম, আবার নিলামে উঠে
কারেন্টের মিস্ত্রি হয়ে যাব, গোলকিপার হয়ে এবার সব শট
আটকে দেব রোনাল্ডো-রিভাল্ডোর। আজ এই বলে তোমার
জ্ঞানচক্ষুর শাটার তুলে দিয়ে যাচ্ছি উদাসীন যে, তু-মি যা-রে
জা-নো সে তো কেউ না, আমরাই "বিশ্বকবি" সিনেমায়
নায়কের স্টান্টম্যান সাজি রোজ, ধ্রুবকাল....
পাঁচ জনের সংসার চলে না। প্রণামীর খুচরোয় রোজকার
সবজি-বাজারটা হতো, হারামির হাতবাক্স বসিয়ে সে-ও
মন্দিরকমিটি খেয়ে গেছে
এদিকে গতবচ্ছর দিব্যি আকাশভরা সূর্যতারার মধ্যে বাবার স্ট্রোক
হয়ে গেল। পুঁজিপাটা খুইয়ে পাথুরিয়াঘাটায় মালিকের বাড়ি
গিয়েছি --- দেখি পাইকা হরফের ওপর গনেশের বাহন অধিষ্ঠান,
মালিক প্রেসের মেশিন বেচে ভাড়াটে বসাবে। ফিরে এসে তিন দিন
মুখ খুলি না, কোন আলোকে প্রাণের প্রদীপ জ্বালাবো ভেবে ভেবে
শুক্কুরবার সাইকেলে ফের দত্তবাড়ির নিত্যপুজোয় বেরিয়ে-তো-ছি,
এখন ডানহাতে বাবার প্যারালিসিস শালগ্রামশিলা আর বাঁহাতে
হ্যান্ডেল ধরলে ব্রেক নেই, বাকশক্তি থেকেও রহিত --- তা যা হবার
তা...... রাব্বারাব্বা অ্যাক্সিডেন্ট হবে
এই যে চোট লাগল, এর চেয়েও বড় শট খেয়েছি ছোটবেলায়
ইলেকট্রিকের কাজ করতে গিয়ে। কাল যখন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে টেনেহিঁচড়ে
আনছ তোমরা, তার মধ্যেই ভেবে নিলাম, আবার নিলামে উঠে
কারেন্টের মিস্ত্রি হয়ে যাব, গোলকিপার হয়ে এবার সব শট
আটকে দেব রোনাল্ডো-রিভাল্ডোর। আজ এই বলে তোমার
জ্ঞানচক্ষুর শাটার তুলে দিয়ে যাচ্ছি উদাসীন যে, তু-মি যা-রে
জা-নো সে তো কেউ না, আমরাই "বিশ্বকবি" সিনেমায়
নায়কের স্টান্টম্যান সাজি রোজ, ধ্রুবকাল....
আবেগকণিকাগুলো ("জাতকের কবিতা"র কবিতা)
আবেগকণিকাগুলো
চন্দন ভট্টাচার্য
সমস্ত দৃশ্যের নিচে কী রয়েছে --- প্রশ্ন এসেছিল
চন্দন ভট্টাচার্য
সমস্ত দৃশ্যের নিচে কী রয়েছে --- প্রশ্ন এসেছিল
চলো দেখি, উত্তর লিখেছি
চোখে পড়ল আরও দেখা, আরও ডুবতে ভাসতে দেখা
পুণ্য অন্ধকার। অন্ধকার যে-সিঁড়ি-নেই তা-ই বেয়ে
নামছে, তারপর একস্তবক চিৎকার শুনলাম। সেই শব্দে
মন আমার শূণ্যে উৎক্ষেপ হয়েছে ফোয়ারার মতো; গলগল
করে বেরোচ্ছে আবেগকণিকাগুলো লাল, সংযমকণিকাগুলো
সাদা। আমি ওই ফাটানো তুবড়ি থেকে শরীর সরিয়ে
এনে দেখি, ছুটছে অস্তিত্ব এমন জাগ্রত সে দেবতা,
তার পঁচিশটা ইন্দ্রিয় হয়েছে, ইন্দ্রিয়ের ইন্দ্র দেখছে এর নিচে
আর নিচু নেই। কাজেই গাছ থেকে ফল উড়ল হে আকাশে,
আমার হে পিপাসা জন্ম দিল নদী, নদীতে পদ্মাসনে বসে
গলার ভেতরে হাত ডুবিয়ে শক্ত করে ধরেছি ফুসফুস
আর রক্ত রুপোলি এতদিনে
আর রক্ত বলছে, "মুকুতা, দেখোনি?"
সত্যিই মুক্তো নাভিকুন্ডলির মুখে বসা, ওর মধ্যে পথ চাই
ওর মুখ তুলে আমার সঙ্গে তেজ-বিনিময়.....
হচ্ছে না কিছুতেই
দৈব্বাণী শুনছি --- তুমি শুধু এটা তল ছুঁয়েছো পথিক
আরও জন্ম নাও, ফিরে ফিরে এসো সুস্বাগত
আমি ঠিক মুখ মনে রাখি
চোখে পড়ল আরও দেখা, আরও ডুবতে ভাসতে দেখা
পুণ্য অন্ধকার। অন্ধকার যে-সিঁড়ি-নেই তা-ই বেয়ে
নামছে, তারপর একস্তবক চিৎকার শুনলাম। সেই শব্দে
মন আমার শূণ্যে উৎক্ষেপ হয়েছে ফোয়ারার মতো; গলগল
করে বেরোচ্ছে আবেগকণিকাগুলো লাল, সংযমকণিকাগুলো
সাদা। আমি ওই ফাটানো তুবড়ি থেকে শরীর সরিয়ে
এনে দেখি, ছুটছে অস্তিত্ব এমন জাগ্রত সে দেবতা,
তার পঁচিশটা ইন্দ্রিয় হয়েছে, ইন্দ্রিয়ের ইন্দ্র দেখছে এর নিচে
আর নিচু নেই। কাজেই গাছ থেকে ফল উড়ল হে আকাশে,
আমার হে পিপাসা জন্ম দিল নদী, নদীতে পদ্মাসনে বসে
গলার ভেতরে হাত ডুবিয়ে শক্ত করে ধরেছি ফুসফুস
আর রক্ত রুপোলি এতদিনে
আর রক্ত বলছে, "মুকুতা, দেখোনি?"
সত্যিই মুক্তো নাভিকুন্ডলির মুখে বসা, ওর মধ্যে পথ চাই
ওর মুখ তুলে আমার সঙ্গে তেজ-বিনিময়.....
হচ্ছে না কিছুতেই
দৈব্বাণী শুনছি --- তুমি শুধু এটা তল ছুঁয়েছো পথিক
আরও জন্ম নাও, ফিরে ফিরে এসো সুস্বাগত
আমি ঠিক মুখ মনে রাখি
দুজন ধার্মিক ("জাতকের কবিতা"র কবিতা)
দুজন ধার্মিক
চন্দন ভট্টাচার্য
প্রজাপতির পেছনে ঠিক একটা বাচ্চা থেকে যায়
অনেক শৈশব ভেঙ্গে পায়ে জল, কাদা
অনেক তারা-দূরত্ব থেকে পেটে কিছু পড়েনি বাচ্চার
এদিকে প্রজাপতি ছুটতে ছুটতে বোনের বাড়ি কিছুটা ব'সে গেল
দুটো প্রজাপতির গলাও শোনা যাচ্ছে, বাচ্চা এত চুপ
একবার এমন হয়েছে, বিছানায় অসুস্থ প্রজাপতি,
আর বাচ্চাটা উড়ছে, উড়ে উড়ে দরকারি কাজ সেরে দিচ্ছে তার
নিজেকে কী ভাবছে সে? সেই হাসি চেপে রাখা কিন্নর?
তার শিরদাঁড়ার ভেতর দিয়ে হালকা উদাস রামধনু রেখা চলে গেছে...
এখন ঘুরে ঘুরে বাতাসে পাহাড় আঁকে আর্টিস্ট প্রজাপতি, বাচ্চা-পা
পা টিপে উঠতে গিয়ে গড়িয়ে পড়ে
মাথা ফেটে যায়
সত্যি দুটো সেলাই পড়েছে, এত জ্বালাস তুই --- ব'লে
একটা ঠাস পড়েছে গালে
তারপর তো তুমি খুঁজেই পাবে না সামনের ছুট আর পেছনের
জি ডি নাম্বার বাইশ
হয়তো লম্বা পৃথিবী থেকে পা পিছলে গেছে দুজন ধার্মিক
তবু প্রজাপতির পেছনে শেষ পর্যন্ত আর তার পরেও
ঠিক সেই বাচ্চা থেকে গেছে ....
চন্দন ভট্টাচার্য
প্রজাপতির পেছনে ঠিক একটা বাচ্চা থেকে যায়
অনেক শৈশব ভেঙ্গে পায়ে জল, কাদা
অনেক তারা-দূরত্ব থেকে পেটে কিছু পড়েনি বাচ্চার
এদিকে প্রজাপতি ছুটতে ছুটতে বোনের বাড়ি কিছুটা ব'সে গেল
দুটো প্রজাপতির গলাও শোনা যাচ্ছে, বাচ্চা এত চুপ
একবার এমন হয়েছে, বিছানায় অসুস্থ প্রজাপতি,
আর বাচ্চাটা উড়ছে, উড়ে উড়ে দরকারি কাজ সেরে দিচ্ছে তার
নিজেকে কী ভাবছে সে? সেই হাসি চেপে রাখা কিন্নর?
তার শিরদাঁড়ার ভেতর দিয়ে হালকা উদাস রামধনু রেখা চলে গেছে...
এখন ঘুরে ঘুরে বাতাসে পাহাড় আঁকে আর্টিস্ট প্রজাপতি, বাচ্চা-পা
পা টিপে উঠতে গিয়ে গড়িয়ে পড়ে
মাথা ফেটে যায়
সত্যি দুটো সেলাই পড়েছে, এত জ্বালাস তুই --- ব'লে
একটা ঠাস পড়েছে গালে
তারপর তো তুমি খুঁজেই পাবে না সামনের ছুট আর পেছনের
জি ডি নাম্বার বাইশ
হয়তো লম্বা পৃথিবী থেকে পা পিছলে গেছে দুজন ধার্মিক
তবু প্রজাপতির পেছনে শেষ পর্যন্ত আর তার পরেও
ঠিক সেই বাচ্চা থেকে গেছে ....
অ্যাসাইলাম থেকে (অগ্রন্থিত)
অ্যাসাইলাম থেকে
চন্দন ভট্টাচার্য
কনস্টান্টিনোপল বহুদিন চুপ করে আছে
চন্দন ভট্টাচার্য
কনস্টান্টিনোপল বহুদিন চুপ করে আছে
ভরাট টিনের মতো নাম --- কনস্টান্টি.....
কবে মুখফোঁড় ননদ ছিলেন
কবে ক্ষারঋতুগন্ধা
দুই বিনুনি পাক দিয়ে মেঝেয় নেমেছে
জোড়া বুক স্ফীত, মোটা, আলো লেগে বরফসৌধ
মূর্তি নিচু করলেও প্রচ্ছায়ার ভূমিকা হয় না
ওর হাতে একটা কমলালেবু দাও
নব ঘুরিয়ে সূর্যাস্ত উপশম করো
বদ্ধতার পুরনো অমৃত
জ'মে জ'মে বিষ, ক্ষয় হয়নি
বদ্ধতার পুরনো গরল
সেও অনুদান পাবে না
এই একমাত্র.... তেতলার রাজধানী মনে হয়
শেতলপাটির মতো গোটানো কার্নিশ
ভগ্নাংশ হারেম, খোজা প্রহরীকে আঘাত করার সামান্য ক্ষমতা
পাওয়া, ফিরে পাওয়া যাক
কনস্টানটিনো শহর কোনও দিনও কথা বলবে না
কবে মুখফোঁড় ননদ ছিলেন
কবে ক্ষারঋতুগন্ধা
দুই বিনুনি পাক দিয়ে মেঝেয় নেমেছে
জোড়া বুক স্ফীত, মোটা, আলো লেগে বরফসৌধ
মূর্তি নিচু করলেও প্রচ্ছায়ার ভূমিকা হয় না
ওর হাতে একটা কমলালেবু দাও
নব ঘুরিয়ে সূর্যাস্ত উপশম করো
বদ্ধতার পুরনো অমৃত
জ'মে জ'মে বিষ, ক্ষয় হয়নি
বদ্ধতার পুরনো গরল
সেও অনুদান পাবে না
এই একমাত্র.... তেতলার রাজধানী মনে হয়
শেতলপাটির মতো গোটানো কার্নিশ
ভগ্নাংশ হারেম, খোজা প্রহরীকে আঘাত করার সামান্য ক্ষমতা
পাওয়া, ফিরে পাওয়া যাক
কনস্টানটিনো শহর কোনও দিনও কথা বলবে না
চুনহলুদ ("তিনটি ডানার পাখি"র কবিতা)
চুনহলুদ
চন্দন ভট্টাচার্য
রাস্তা্র আসতে-বাঁদিক দিয়ে ছমছম করে নদী গেছে
চন্দন ভট্টাচার্য
রাস্তা্র আসতে-বাঁদিক দিয়ে ছমছম করে নদী গেছে
আড়খ্যাপা ভ্যান-রিকশাওলা ঠিক
মোড় ঘোরাতে উলটে ফেলে দেবে
রাস্তার আসতে-ডানদিক দিয়ে
নাচনেউলি ধান আর ভ্যারাইটিজ হাওয়া
ছোটমাসি, তোমাকে বলছি.....
ঘরের বারান্দাখানা কমপক্ষে দুমানুষ উঁচু
ঘরের বাসিন্দাটি ছায়া-টেনে সারা পাড়া ঘোরে
"এই জায়গায় দুটো খরিশ বসতি করে
এখানে তুই গতবার লক্ষীপেঁচা দেখেছিলিস"
'ছিলিস' কী বস্তু ব'লে হাসো যদি
"হুঁ হুঁ বাবু, ঠোঁটের ওপরে তিল
তুমি খুব ডেঞ্জারাস ছেলে !"
বিপদ-জননী মেয়ে তুমিও তো !
বিকেলবেলা ঘুম ভাঙ্গিয়ে সেতুর ওপরে নিয়ে গেছ
"নদীর দুপারও মেলে, দেখেছিস?
মানুষ মেলাতে পারে সাহস করলেই" ব'লে
ভেসে বেড়াচ্ছ....অন্ধকার....তোমার না কোন পায়ে
মচকা লেগেছিল !
"পায়ে চুনহলুদ করলেই ভালো খবর পাই
গায়েহলুদ হয় তাপসীদির, দাদার চিঠি সিওল থেকে আসে,
আরও কেউ একটা আসিস....
ছোটমাসি, তোমাকে আর কিচ্ছু বলি না
মোড় ঘোরাতে উলটে ফেলে দেবে
রাস্তার আসতে-ডানদিক দিয়ে
নাচনেউলি ধান আর ভ্যারাইটিজ হাওয়া
ছোটমাসি, তোমাকে বলছি.....
ঘরের বারান্দাখানা কমপক্ষে দুমানুষ উঁচু
ঘরের বাসিন্দাটি ছায়া-টেনে সারা পাড়া ঘোরে
"এই জায়গায় দুটো খরিশ বসতি করে
এখানে তুই গতবার লক্ষীপেঁচা দেখেছিলিস"
'ছিলিস' কী বস্তু ব'লে হাসো যদি
"হুঁ হুঁ বাবু, ঠোঁটের ওপরে তিল
তুমি খুব ডেঞ্জারাস ছেলে !"
বিপদ-জননী মেয়ে তুমিও তো !
বিকেলবেলা ঘুম ভাঙ্গিয়ে সেতুর ওপরে নিয়ে গেছ
"নদীর দুপারও মেলে, দেখেছিস?
মানুষ মেলাতে পারে সাহস করলেই" ব'লে
ভেসে বেড়াচ্ছ....অন্ধকার....তোমার না কোন পায়ে
মচকা লেগেছিল !
"পায়ে চুনহলুদ করলেই ভালো খবর পাই
গায়েহলুদ হয় তাপসীদির, দাদার চিঠি সিওল থেকে আসে,
আরও কেউ একটা আসিস....
ছোটমাসি, তোমাকে আর কিচ্ছু বলি না
সান্ধ্য কলেজ ("জাতকের কবিতা"র কবিতা)
সান্ধ্য কলেজ
চন্দন ভট্টাচার্য
আমার সঙ্গে কথা বলো অশালীন আকাশের ঢেউ
চন্দন ভট্টাচার্য
আমার সঙ্গে কথা বলো অশালীন আকাশের ঢেউ
আমার হাতে ঝরে পড়ো তারাদের বিড়ি-সিগারেট
দোলনায় এক-দোল খেয়ে উঠে যাওয়া পাহাড়ি রাস্তায়
আমার পায়ে পায়ে জড়াও মেঘ, মেঘের পাথর কারখানা
আমি তো মাথায় করে আখ বইতাম
আমারও পেছনে ছিল কালো-হলুদ কুকুরের দল
শুধু সেবার জামরুলথোকার গা ঘেঁষে পাথর
ছুট লাগালো সান্ধ্য কলেজে
জড়িয়ে গেল এক পশলা হাওয়ার সাথে
জ্যায়সে মন্দির মেঁ হো এক জলতা দীয়া....
দুজনে হাত ধরে পার হলাম টাইপ-এর রেললাইন আর ডি.টি.পি. এক্সপ্রেস
দৌড়ে এসেছিল সে-কথাও যেন মনে পড়ে
যেন আমার দুবার মনে থাকে ---
তোর মুখে মিথ্যে মানায় না, অনুপম
আমার সঙ্গে রাজি হও কুয়াশা থেকে বিচ্ছিন্ন কুয়াশা
মাথায় ঠান্ডা লাগতে থাকো
অসম্ভব বুকে বসে যাও
আমি সত্যি জানতে চাইবো না
যে-মোম ফুঁ দিয়ে নিভিয়েছ তাকে ফুঁ দিয়েই কীভাবে জ্বালালে !
দোলনায় এক-দোল খেয়ে উঠে যাওয়া পাহাড়ি রাস্তায়
আমার পায়ে পায়ে জড়াও মেঘ, মেঘের পাথর কারখানা
আমি তো মাথায় করে আখ বইতাম
আমারও পেছনে ছিল কালো-হলুদ কুকুরের দল
শুধু সেবার জামরুলথোকার গা ঘেঁষে পাথর
ছুট লাগালো সান্ধ্য কলেজে
জড়িয়ে গেল এক পশলা হাওয়ার সাথে
জ্যায়সে মন্দির মেঁ হো এক জলতা দীয়া....
দুজনে হাত ধরে পার হলাম টাইপ-এর রেললাইন আর ডি.টি.পি. এক্সপ্রেস
দৌড়ে এসেছিল সে-কথাও যেন মনে পড়ে
যেন আমার দুবার মনে থাকে ---
তোর মুখে মিথ্যে মানায় না, অনুপম
আমার সঙ্গে রাজি হও কুয়াশা থেকে বিচ্ছিন্ন কুয়াশা
মাথায় ঠান্ডা লাগতে থাকো
অসম্ভব বুকে বসে যাও
আমি সত্যি জানতে চাইবো না
যে-মোম ফুঁ দিয়ে নিভিয়েছ তাকে ফুঁ দিয়েই কীভাবে জ্বালালে !
চাতকী ("জগৎমঙ্গল কাব্য" বইয়ের কবিতা)
চাতকী
চন্দন ভট্টাচার্য
না গো বউমণি, চিঠি পড়লে তোমার শোকদুঃখ পাবে
চন্দন ভট্টাচার্য
না গো বউমণি, চিঠি পড়লে তোমার শোকদুঃখ পাবে
জানলা দিয়ে পুরনো বাড়ি দেখলেই
'এটা বুঝি বিদ্যাসাগরের?' যে জিগেস করতো
সেই গবেষণাসাগর হঠাৎ হঠাৎ লিখে
দশ পাতা অ্যারোডাইনামিকস আমাকে বোঝায়
বাথরুম ইউজ করতে জানত না, মনে আছে?
ন'দিনের ছোট ব'লে কান ধরতে আমার অধিকার
কিন্তু রোজ সকালে সেই বোকা পণ্ডিতের কাছেই
অংক জল, রসায়ন জল
জলের সাগর ব'লে এ-বাড়ির স্লুইস গেট খুলতে পেরেছিল
এখন ভাবি, ও-দেশেও পুরনো কোঠা দেখলেই
ধরো, মার্ক টোয়েনের বাড়ি কিনা জিগ্যেস করে?
তা করুক, তৎক্ষণাৎ গাঁট্টা এসে মাথা ছোঁয় না তো !
না বউমণি, সব অভ্যেস পালটায়নি গো
চা দিলে সেই এক-ঘন্টা থামিয়ে তবে খাবে
ওকে বরং একটা কথা জানিয়ে দাও তুমি
জানাও যে, চায়ে চুমুক দেওয়াই তাকে জুড়ানোর শ্রেষ্ঠ উপায়
'এটা বুঝি বিদ্যাসাগরের?' যে জিগেস করতো
সেই গবেষণাসাগর হঠাৎ হঠাৎ লিখে
দশ পাতা অ্যারোডাইনামিকস আমাকে বোঝায়
বাথরুম ইউজ করতে জানত না, মনে আছে?
ন'দিনের ছোট ব'লে কান ধরতে আমার অধিকার
কিন্তু রোজ সকালে সেই বোকা পণ্ডিতের কাছেই
অংক জল, রসায়ন জল
জলের সাগর ব'লে এ-বাড়ির স্লুইস গেট খুলতে পেরেছিল
এখন ভাবি, ও-দেশেও পুরনো কোঠা দেখলেই
ধরো, মার্ক টোয়েনের বাড়ি কিনা জিগ্যেস করে?
তা করুক, তৎক্ষণাৎ গাঁট্টা এসে মাথা ছোঁয় না তো !
না বউমণি, সব অভ্যেস পালটায়নি গো
চা দিলে সেই এক-ঘন্টা থামিয়ে তবে খাবে
ওকে বরং একটা কথা জানিয়ে দাও তুমি
জানাও যে, চায়ে চুমুক দেওয়াই তাকে জুড়ানোর শ্রেষ্ঠ উপায়
চন্দ্রমল্লিকা ("জাতকের কবিতা"র কবিতা)
চন্দ্রমল্লিকা
চন্দন ভট্টাচার্য
সব পাখি আমার দিকেই উড়ে যায়
চন্দন ভট্টাচার্য
সব পাখি আমার দিকেই উড়ে যায়
প্রশ্নের, উত্তরের সব পাখি
আমার ভেতরে অন্য কোনও দিক পেয়ে গেছে
নাহ, ও ভুল শিষ দিয়েছিল। পাখি ভুল ভাঙাতে ওস্তাদ।
বুকের পংক্তি ভেঙ্গে ভেতরে ছুটে আসে, আর পিঠ ভেদ করে
এভাবে বেরিয়ে যায় ধারালো পালক
যেন আমি নেই, যেন আমি --- কী বলব --- খুব সামান্য জন্মেছি
তবুও পথের গায়ে কেউ পাখি বসিয়ে রাখো তো !
দুখানা হাড়ের শিরে চন্দ্রমল্লিকা
সেই পথ আমাকে উৎসর্গ করে দাও
গাছ ঠিকই রাগ করবে, বড়বাবু গাছ
হয়ত ধমক দিতে পারে
ওকে বুঝিয়ে বলব, সব পাখি অন্ধ, তাই সব পাখি গান গাইতে পারে, তাই পাখি
যেটুকু মাঙন ভিক্ষে পাবে
তাতে দুজনের এক জীবন দিব্যি কেটে যায়.....
গতজন্মে আমি পাখি হব
আমার ভেতরে অন্য কোনও দিক পেয়ে গেছে
নাহ, ও ভুল শিষ দিয়েছিল। পাখি ভুল ভাঙাতে ওস্তাদ।
বুকের পংক্তি ভেঙ্গে ভেতরে ছুটে আসে, আর পিঠ ভেদ করে
এভাবে বেরিয়ে যায় ধারালো পালক
যেন আমি নেই, যেন আমি --- কী বলব --- খুব সামান্য জন্মেছি
তবুও পথের গায়ে কেউ পাখি বসিয়ে রাখো তো !
দুখানা হাড়ের শিরে চন্দ্রমল্লিকা
সেই পথ আমাকে উৎসর্গ করে দাও
গাছ ঠিকই রাগ করবে, বড়বাবু গাছ
হয়ত ধমক দিতে পারে
ওকে বুঝিয়ে বলব, সব পাখি অন্ধ, তাই সব পাখি গান গাইতে পারে, তাই পাখি
যেটুকু মাঙন ভিক্ষে পাবে
তাতে দুজনের এক জীবন দিব্যি কেটে যায়.....
গতজন্মে আমি পাখি হব
রাজনৈতিক সততা ("জগৎমঙ্গল কাব্য" বইয়ের কবিতা)
রাজনৈতিক সততা
চন্দন ভট্টাচার্য
এস ইউ সি আই সৎ, কেন না তারা সুযোগ পায়নি
তোমার মুখস্থ স্বামী স্নেহ পায়, ভরা পেটে
মুখসুদ্ধি চুমু, আর রাত ছায়ার জীবাশ্ম হয়ে গেলে
স্নেহ দু'মলাটের মধ্যে ক'রে বালিশে সাজানো
ঠিক সেই মুহূর্তে চাঁদ মুখ বাড়িয়েছিল জানলা খুলে
পানের পিক ফেলে ফেলে ভূত করে দিয়েছিল ঘরের দেয়াল
নিষ্কলংক সকাল আবার। সংসারের গালে টোকা দিয়ে
ঘুম ভাঙানো, তারপর নটা চল্লিশ ধরে
পৌঁছে যাব ছেলের ইশকুলে। দশটার মেট্রোয়
যাওয়া যায়, কিন্তু ঊর্মিলার মেয়েকে নিতে ওর বর এসে
দাঁড়িয়ে থাকবে না ! কাঁধে কাঁধ নিষ্কলংক ঠেকে যাচ্ছে,
দুচোখে গোধরা..... শেয়ারের অটো এর বেশি
দাঙ্গাবাজ হতে শেখেনি
এস ইউ সি আই এখনও সৎ পার্টি
চন্দন ভট্টাচার্য
এস ইউ সি আই সৎ, কেন না তারা সুযোগ পায়নি
তোমার মুখস্থ স্বামী স্নেহ পায়, ভরা পেটে
মুখসুদ্ধি চুমু, আর রাত ছায়ার জীবাশ্ম হয়ে গেলে
স্নেহ দু'মলাটের মধ্যে ক'রে বালিশে সাজানো
ঠিক সেই মুহূর্তে চাঁদ মুখ বাড়িয়েছিল জানলা খুলে
পানের পিক ফেলে ফেলে ভূত করে দিয়েছিল ঘরের দেয়াল
নিষ্কলংক সকাল আবার। সংসারের গালে টোকা দিয়ে
ঘুম ভাঙানো, তারপর নটা চল্লিশ ধরে
পৌঁছে যাব ছেলের ইশকুলে। দশটার মেট্রোয়
যাওয়া যায়, কিন্তু ঊর্মিলার মেয়েকে নিতে ওর বর এসে
দাঁড়িয়ে থাকবে না ! কাঁধে কাঁধ নিষ্কলংক ঠেকে যাচ্ছে,
দুচোখে গোধরা..... শেয়ারের অটো এর বেশি
দাঙ্গাবাজ হতে শেখেনি
এস ইউ সি আই এখনও সৎ পার্টি
গ্রহণস্তব ("তিনটি ডানার পাখি"র কবিতা)
গ্রহণস্তব
চন্দন ভট্টাচার্য
আমি যদি ধর্মহীন হই
চন্দন ভট্টাচার্য
আমি যদি ধর্মহীন হই
তবুও আমার অন্ন মুখে নাও তুমি
আমি যদি মায়াহীন হত্যাকারী হই
তুমি আমায় সরিয়ে দাও দূর সম্পর্কের বাড়ি, উত্তরপ্রদেশে
পড়তে পড়তে হয়তো মুখে রক্ত ওঠে
তুমি বিধবার মতো সাদা আধপোয়া দুধে
ঘ'ষে ঘ'ষে নীরক্ত মোছাও
যখন আমি বায়ুহীন আগুনে পুড়ি নারকোল পাতার অগ্রভাগ
তুমি ঝঁপিয়ে এসে বসো, দোল ওঠে, আবার
বিচিত্র উড়ে যাও দোল-শেষ দিয়ে
আমি যেই না হাতজোড় নতমুণ্ড হই
দেখি দেখি মুখ দেখি ব'লে তুমি ঝুঁকে পড়ো ভুজ্যি থেকে
বল--- কান্না মিশে গেলে কিন্তু প্রার্থনা নেবো না
তবু আমি জেদ করি
যত বড় অনামুখো, ইতরশ্রেণীর দেহ হই
হাঁ করো মা
মধুমাখা সূর্যগ্রাস-চন্দ্রগ্রাসদুটি মুখে তোলো
আমি যদি মায়াহীন হত্যাকারী হই
তুমি আমায় সরিয়ে দাও দূর সম্পর্কের বাড়ি, উত্তরপ্রদেশে
পড়তে পড়তে হয়তো মুখে রক্ত ওঠে
তুমি বিধবার মতো সাদা আধপোয়া দুধে
ঘ'ষে ঘ'ষে নীরক্ত মোছাও
যখন আমি বায়ুহীন আগুনে পুড়ি নারকোল পাতার অগ্রভাগ
তুমি ঝঁপিয়ে এসে বসো, দোল ওঠে, আবার
বিচিত্র উড়ে যাও দোল-শেষ দিয়ে
আমি যেই না হাতজোড় নতমুণ্ড হই
দেখি দেখি মুখ দেখি ব'লে তুমি ঝুঁকে পড়ো ভুজ্যি থেকে
বল--- কান্না মিশে গেলে কিন্তু প্রার্থনা নেবো না
তবু আমি জেদ করি
যত বড় অনামুখো, ইতরশ্রেণীর দেহ হই
হাঁ করো মা
মধুমাখা সূর্যগ্রাস-চন্দ্রগ্রাসদুটি মুখে তোলো
শক্তিশালী ("জাতকের কবিতা"র কবিতা)
শক্তিশালী
চন্দন ভট্টাচার্য
যে কোনও মুহূর্তে পড়ে যাবে পাহাড়
চন্দন ভট্টাচার্য
যে কোনও মুহূর্তে পড়ে যাবে পাহাড়
তার মাথায় শক্ত হয়ে বসেছে পুলিশফাঁড়ি
দীর্ঘ দীর্ঘ আয়ুগাছের মধ্যে ফেরার হয়ে আছে
যে জঙ্গলে প্রেমিক-প্রেমিকা ছুটে আসে
আর হাত ধরাধরি করে ঝাঁপ দেয় নিচে, খাদের চূড়ায়
ঝাঁপ দেওয়ার একরকম ঝরণা বইতে থাকে....
বিদায় নেবে --- তাই তাদের শক্তিশালী চুমু-বিনিময়
পুলিশফাঁড়ি এক সূর্যাস্ত গায়ে পাহারা দিচ্ছে
দীর্ঘ দীর্ঘ আয়ুগাছের মধ্যে ফেরার হয়ে আছে
যে জঙ্গলে প্রেমিক-প্রেমিকা ছুটে আসে
আর হাত ধরাধরি করে ঝাঁপ দেয় নিচে, খাদের চূড়ায়
ঝাঁপ দেওয়ার একরকম ঝরণা বইতে থাকে....
বিদায় নেবে --- তাই তাদের শক্তিশালী চুমু-বিনিময়
পুলিশফাঁড়ি এক সূর্যাস্ত গায়ে পাহারা দিচ্ছে
ঘাস একদিন ("তিনটি ডানার পাখি" বইয়ের কবিতা)
ঘাস একদিন
চন্দন ভট্টাচার্য
ঘাস একদিন কথা বলছিল। বলছিল তার শীর্ষবিন্দু দিয়ে
চন্দন ভট্টাচার্য
ঘাস একদিন কথা বলছিল। বলছিল তার শীর্ষবিন্দু দিয়ে
যেখানে নিজের ঠেলাগাড়ি নিয়ে ওঠে কাচপোকা, উঠে
দূরবীন ঘুরিয়ে বিকেলের সবটুকু দেখতে পায়। ঘাসের চুড়ো
থেকে যদি একটা কর্ণ টেনে নাও, তবে সে আমাদের
পায়ের পাতা ছোঁবে। আমরা পা দিয়ে শুনছিলাম....
মৃত ঘাসের কথাই সবচেয়ে সবুজ। তার গায়ের কাছে
জলের গুদাম, মার খেতে খেতে ক্লান্ত ক্যাম্বিস বল
যেদিকে ছুট লাগায় আর পেট মোটা করে ফেরত আসে।
তখন আমরা তো ঘাসেই ঘ'ষতে থাকি ওর মুখ
আর ঠোঁট ছ'ড়ে যাওয়া বোরোলীনহীন বলটাকে নিয়ে
রান আপ-এর দিকে হাঁটতে হাঁটতে শুনি
ঘাস কথা শুরু করেছে, কথ্য বাংলায়
খুব ঘন কথা বলে না সে। বলছিলও না।
ছিপে ধরা মাছ বিনা অকারণে জলে ছেড়ে দিতে
ঠিক ক'টা হোমিওপ্যাথির শিশিভর্তি মিষ্টি তেজি
আনন্দ হয়, অথবা কীভাবে পায়ের নিচে পড়েও
সারাক্ষণ মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকে সে ---
শুনতে শুনতে ফেড-আপ শিরীষ-ডালে তখনও ঝুলছে একা
ভুলোমনের সোয়েটার!
তখন সি.জি.এস. বা এফ.পি.এস. কোন পদ্ধতিতে তুমি তার
সম্বিত ফেরাও, যাতে দৌড়োনোর আগে হেঁটে সে
পড়াশোনার প্যাভিলিয়নে ফেরত আসে --- কিছুতে জানালে না ঘাস ---
মাঠের চাপদাড়ি কোথাকার !
দূরবীন ঘুরিয়ে বিকেলের সবটুকু দেখতে পায়। ঘাসের চুড়ো
থেকে যদি একটা কর্ণ টেনে নাও, তবে সে আমাদের
পায়ের পাতা ছোঁবে। আমরা পা দিয়ে শুনছিলাম....
মৃত ঘাসের কথাই সবচেয়ে সবুজ। তার গায়ের কাছে
জলের গুদাম, মার খেতে খেতে ক্লান্ত ক্যাম্বিস বল
যেদিকে ছুট লাগায় আর পেট মোটা করে ফেরত আসে।
তখন আমরা তো ঘাসেই ঘ'ষতে থাকি ওর মুখ
আর ঠোঁট ছ'ড়ে যাওয়া বোরোলীনহীন বলটাকে নিয়ে
রান আপ-এর দিকে হাঁটতে হাঁটতে শুনি
ঘাস কথা শুরু করেছে, কথ্য বাংলায়
খুব ঘন কথা বলে না সে। বলছিলও না।
ছিপে ধরা মাছ বিনা অকারণে জলে ছেড়ে দিতে
ঠিক ক'টা হোমিওপ্যাথির শিশিভর্তি মিষ্টি তেজি
আনন্দ হয়, অথবা কীভাবে পায়ের নিচে পড়েও
সারাক্ষণ মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকে সে ---
শুনতে শুনতে ফেড-আপ শিরীষ-ডালে তখনও ঝুলছে একা
ভুলোমনের সোয়েটার!
তখন সি.জি.এস. বা এফ.পি.এস. কোন পদ্ধতিতে তুমি তার
সম্বিত ফেরাও, যাতে দৌড়োনোর আগে হেঁটে সে
পড়াশোনার প্যাভিলিয়নে ফেরত আসে --- কিছুতে জানালে না ঘাস ---
মাঠের চাপদাড়ি কোথাকার !
মৃত্যুকবিতা ("তিনটি ডানার পাখি" বইয়ের কবিতা)
মৃত্যুকবিতা
চন্দন ভট্টাচার্য
ক
চন্দন ভট্টাচার্য
ক
প্রতিটা সময় বউ অথবা গোলাপবাচ্চার সঙ্গে কাটানো উচিত।
আলো নেই, আসবে সেই রাতে খাওয়ার পরে।
সব দেশেই দার্শনিকের চেয়ে ডাক্তারের বেশি রোজগার।
কাদা-রাস্তায় উঁচু পাথরে পিছিয়ে যাচ্ছে বাড়ি ফেরা।
যে কোনও ব্যথাই মৃত্যুর দিকে বাঁক ফিরে যায়।
এই সব ফালতু কথায় আমার অবস্থা বোঝাতে পারছি না
মহৎ হব বলে দোতলার ঘরে উঠেছিলাম
শুধু নিচে নামতে পারি --- অসামান্য নিচে নেমে মনোরম
নিচে নেমে উচ্চমুখ নিচে নেমে যাই....
অন্য সবাই তালা দিয়ে খুলুক দরজা
খ
এখন আপনার উচিত ঈশ্বরে বিশ্বাস।
এখন আপনার ভালো ডক্টর বাগচির কথা শুনে চলা।
এমনও সময় আসে ডুস দিয়ে কাজ হয় না।
গ্লোবালাইজেশন হলে ওষুধটা এখুনি পাওয়া যেত।
আমি কত বলেছি ওভাবে ওড়াস না টাকা।
যা নিজে বুঝবে করবে চিরটা কাল এই স্বভাব।
জীবন আপনার, মৃত্যুও তাই, আমরা শুধু পাড়াপ্রতিবেশী
আমরা কেবল সুস্থ প্রশাসন আর পাঁচ মিনিটে রেডি
শব বাহকেরা.....
আলো নেই, আসবে সেই রাতে খাওয়ার পরে।
সব দেশেই দার্শনিকের চেয়ে ডাক্তারের বেশি রোজগার।
কাদা-রাস্তায় উঁচু পাথরে পিছিয়ে যাচ্ছে বাড়ি ফেরা।
যে কোনও ব্যথাই মৃত্যুর দিকে বাঁক ফিরে যায়।
এই সব ফালতু কথায় আমার অবস্থা বোঝাতে পারছি না
মহৎ হব বলে দোতলার ঘরে উঠেছিলাম
শুধু নিচে নামতে পারি --- অসামান্য নিচে নেমে মনোরম
নিচে নেমে উচ্চমুখ নিচে নেমে যাই....
অন্য সবাই তালা দিয়ে খুলুক দরজা
খ
এখন আপনার উচিত ঈশ্বরে বিশ্বাস।
এখন আপনার ভালো ডক্টর বাগচির কথা শুনে চলা।
এমনও সময় আসে ডুস দিয়ে কাজ হয় না।
গ্লোবালাইজেশন হলে ওষুধটা এখুনি পাওয়া যেত।
আমি কত বলেছি ওভাবে ওড়াস না টাকা।
যা নিজে বুঝবে করবে চিরটা কাল এই স্বভাব।
জীবন আপনার, মৃত্যুও তাই, আমরা শুধু পাড়াপ্রতিবেশী
আমরা কেবল সুস্থ প্রশাসন আর পাঁচ মিনিটে রেডি
শব বাহকেরা.....
ঝাড়-খাওয়া কবিতাগুচ্ছ ("জগৎমঙ্গল কাব্য" বইয়ের কবিতা)
ঝাড়-খাওয়া কবিতাগুচ্ছ
চন্দন ভট্টাচার্য
ওহ, যন্ত্রণায় খুন হচ্ছি --- এছাড়া আর কী বলব, ভবভূতি
চন্দন ভট্টাচার্য
ওহ, যন্ত্রণায় খুন হচ্ছি --- এছাড়া আর কী বলব, ভবভূতি
যা সত্যি তাইতো কথা, নাকি স ত্যি-মিথ্যে বিস্কুট
জিভে ফিফটি-ফিফটি ভেঙে যায়
লাল হয়ে উঠেছে কলম, বুঝেছো তো, কলম
চালানো যাচ্ছে না লিভারে ফুসফুসে
আমারও গলায় কাতর ছাড়া শব্দ নেই
ভাষণের ওপর গাদা গাদা সাদা পাখি লুটিয়ে পড়েছে
কন্ঠতলে পাখির শ্মশান
আর এই অবসারণী যে পর্যন্ত বাঁটকুল, তার শেষ মাথায়
অন্য একটা কলম, সেখানে অসহ্য রক্ত
মিষ্টির দোকানে যেরকম বাচ্চা খেটে চলে, ততখানি তাণ্ডব যন্ত্রণা
আরও অতিরিক্ত চার রান এখানে যে স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙে
ঘুম নেই, স্বপ্ন নেই, অজস্র অবশ.....
আমার বিনাশ করতে ইচ্ছে করে, জানো মেঘ
এক মুহূর্তে ফিরিয়ে দিতে জগৎ-শেখা, সাইকেল-পাশ
মুখ থেকে যে ঝাড়-খাওয়ার ফিনকি বেরিয়ে আসছে
তার গলগল আর চাপচাপ দিব্যি
আমার বিশ্রি করতে ইচ্ছে যায়, বিবস্বান
জিভে ফিফটি-ফিফটি ভেঙে যায়
লাল হয়ে উঠেছে কলম, বুঝেছো তো, কলম
চালানো যাচ্ছে না লিভারে ফুসফুসে
আমারও গলায় কাতর ছাড়া শব্দ নেই
ভাষণের ওপর গাদা গাদা সাদা পাখি লুটিয়ে পড়েছে
কন্ঠতলে পাখির শ্মশান
আর এই অবসারণী যে পর্যন্ত বাঁটকুল, তার শেষ মাথায়
অন্য একটা কলম, সেখানে অসহ্য রক্ত
মিষ্টির দোকানে যেরকম বাচ্চা খেটে চলে, ততখানি তাণ্ডব যন্ত্রণা
আরও অতিরিক্ত চার রান এখানে যে স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙে
ঘুম নেই, স্বপ্ন নেই, অজস্র অবশ.....
আমার বিনাশ করতে ইচ্ছে করে, জানো মেঘ
এক মুহূর্তে ফিরিয়ে দিতে জগৎ-শেখা, সাইকেল-পাশ
মুখ থেকে যে ঝাড়-খাওয়ার ফিনকি বেরিয়ে আসছে
তার গলগল আর চাপচাপ দিব্যি
আমার বিশ্রি করতে ইচ্ছে যায়, বিবস্বান
আশা-সঞ্জীব ("জাতকের কবিতা"র কবিতা)
আশা-সঞ্জীব
চন্দন ভট্টাচার্য
চাপা সূর্য খাদটাকে বেড় দিয়ে আছে
চন্দন ভট্টাচার্য
চাপা সূর্য খাদটাকে বেড় দিয়ে আছে
মার্জিত খাদের গায়ে ফুটে উঠেছে চাপা সম্মান
যতই সম্মান দেখাক আশা পারেখকে আমাদের
সঞ্জীবকুমার, রসকষসিঙাড়ার সেই চাপা খেলাটা
শুরু হচ্ছে। রামধনুর ছোট ছোট পা, পাগুলো
হাত রেখেছে খাদের কোমরে, আর ওমনি, চাপা খিদের
দুদিকেই একসঙ্গে কামড় পড়েছে
যতই সম্মান দেখাক আশা পারেখকে আমাদের
সঞ্জীবকুমার, রসকষসিঙাড়ার সেই চাপা খেলাটা
শুরু হচ্ছে। রামধনুর ছোট ছোট পা, পাগুলো
হাত রেখেছে খাদের কোমরে, আর ওমনি, চাপা খিদের
দুদিকেই একসঙ্গে কামড় পড়েছে
বিচ্ছেদও বকুল ("নবরত্ন কারাদণ্ড সবুজ" বইয়ের কবিতা)
বিচ্ছেদও বকুল
চন্দন ভট্টাচার্য
হালকা-মতো হয়ে যাচ্ছি রাস্তা পার
মোটর-সাইকেলকে অ্যাত্তোখানি সাইড "দুঃখিত" ব'লে,
কিন্তু আসলে খুশি-খুশি !
দোকানি-খদ্দেরে ভাব করিয়ে দিচ্ছি একটা লেবু চা হ'য়ে
খানা হয়ে মিশে গেলাম খন্দের আড্ডায়
চন্দন ভট্টাচার্য
হালকা-মতো হয়ে যাচ্ছি রাস্তা পার
মোটর-সাইকেলকে অ্যাত্তোখানি সাইড "দুঃখিত" ব'লে,
কিন্তু আসলে খুশি-খুশি !
দোকানি-খদ্দেরে ভাব করিয়ে দিচ্ছি একটা লেবু চা হ'য়ে
খানা হয়ে মিশে গেলাম খন্দের আড্ডায়
খুব গরম? দরখাস্ত ঠোকো, উঁচু হবে দুপুরের ছাদ
করমর্দন ক'রে টেনে আনছি সন্ধেকে
বুকহলুদ বাঁশপাতা একটা বাতাস আবৃত্তি করলো কী মসৃণ
বৃষ্টিও সাম্রাজ্যবিস্তারে ব্যস্ত মেঘ-সেনাপতি পাঠিয়ে পাঠিয়ে
দ্যাখো, গিঁট খোলার কত সহজ পদ্ধতি
গিঁট পড়তে না দেওয়া....
যে মৃত, সে-ও সেবা পাওয়ার ইচ্ছেয় মরোমরো
তাহলে দেওয়া যাক কৌটো উপুড় ---
অন্যায়কে এত চুমু যে তার চোখদুটো ঢাই অকষর, আর
আটপৌরে থেকে তোলা-কাপড় ক'রে দিলাম রক্তপাত --- তোকে।
বিবাহ বকুল যদি, বিচ্ছেদও বকুল
জীবনকে কুড়িয়ে একটা পাতিয়ালা-তোড়া শুভেচ্ছার হাতে দিয়েছি তো
এবার হালকা-পানা হয়ে যাচ্ছি রাস্তা পার
করমর্দন ক'রে টেনে আনছি সন্ধেকে
বুকহলুদ বাঁশপাতা একটা বাতাস আবৃত্তি করলো কী মসৃণ
বৃষ্টিও সাম্রাজ্যবিস্তারে ব্যস্ত মেঘ-সেনাপতি পাঠিয়ে পাঠিয়ে
দ্যাখো, গিঁট খোলার কত সহজ পদ্ধতি
গিঁট পড়তে না দেওয়া....
যে মৃত, সে-ও সেবা পাওয়ার ইচ্ছেয় মরোমরো
তাহলে দেওয়া যাক কৌটো উপুড় ---
অন্যায়কে এত চুমু যে তার চোখদুটো ঢাই অকষর, আর
আটপৌরে থেকে তোলা-কাপড় ক'রে দিলাম রক্তপাত --- তোকে।
বিবাহ বকুল যদি, বিচ্ছেদও বকুল
জীবনকে কুড়িয়ে একটা পাতিয়ালা-তোড়া শুভেচ্ছার হাতে দিয়েছি তো
এবার হালকা-পানা হয়ে যাচ্ছি রাস্তা পার
পুরনো মেয়েদের দুপুরবেলার বিন্তিখেলা ("নবরত্ন কারাদণ্ড সবুজ" বইয়ের কবিতা)
পুরনো মেয়েদের দুপুরবেলায় বিন্তিখেলা....
চন্দন ভট্টাচার্য
যেন মাটির দাওয়া উঁচু, কোথাও ফাট নেই এত
কথায় কথায় গোবর-নিকোনো
উঠোনের পিছুতে পুকুর, জলে বাঁশডালের নত-নমস্কার
দুপুর যত রোদালো তত ছায়া আমরা বেঁধে রেখেছি
কামিনীগাছে, বাতাবিতলায়
যত রূপ দিয়ে উচ্ছ্বসিত করুক কেন শরীরনৌকো,
চন্দন ভট্টাচার্য
যেন মাটির দাওয়া উঁচু, কোথাও ফাট নেই এত
কথায় কথায় গোবর-নিকোনো
উঠোনের পিছুতে পুকুর, জলে বাঁশডালের নত-নমস্কার
দুপুর যত রোদালো তত ছায়া আমরা বেঁধে রেখেছি
কামিনীগাছে, বাতাবিতলায়
যত রূপ দিয়ে উচ্ছ্বসিত করুক কেন শরীরনৌকো,
আমরা প্রশমন --- ভাতের গরম নিঃশ্বাসে,
তামার রেকাবি করা মালক্ষ্মীর শসা-বাতাসায়
তোমাদের ওপর দিয়ে ইতিহাস বয়ে যায় নিশ্চুপ
ঢেঁকিতে পাড় দেওয়া পায়ে দুদিনের বাসি আলতা
সন্ধেয় খারাপ শরীর সকালে স্বাধীনভাবে সেরে ওঠে
আর নদী-যাওয়ার মাঝখানে ঘোর আতাবাগানের মধ্যে পায়খানা
শুকনো পাতা আর গিরগিটি-শান্তি ছাড়া যেখানে
অন্যকিছু নড়ে উঠছে না
তাহলে আঁচলে বাঁধা গেল সংসারকে
তাহলে লজ্জিত যৌনতার সঙ্গে মিশে থাকল আগুনমিশ্রিত স্নেহ
আদেশ যেখানে, কী আশ্চর্য, অপমান হয়ে আসে না !
এবং নায়কেরাও নেয়াপাতি, পৈতে-গামছা কাঁধে
নাভিতে সরষের তেল, গলায় গরগর করছে শ্রীশ্রীচণ্ডিকা
এবং ঘুমিয়েও পড়ছে ঘন দুপুর ধুতি-বানিয়ানে;
আমার পুরনো মেয়েরা --- বোনঝি-ভাস্তি, পিসশাশুড়ি-বৌঠান
রোদ যখন পেঁপে গাছের মাথায় শান্ত বুলবুলি
গোলামচোর খেলায় হাসতে গিয়ে
কী বিষমটাই না খাচ্ছ পান সুপুরি মুখে !
পরপুরুষ গ্লাসভর্তি কাচের জল, নেবে না?
তামার রেকাবি করা মালক্ষ্মীর শসা-বাতাসায়
তোমাদের ওপর দিয়ে ইতিহাস বয়ে যায় নিশ্চুপ
ঢেঁকিতে পাড় দেওয়া পায়ে দুদিনের বাসি আলতা
সন্ধেয় খারাপ শরীর সকালে স্বাধীনভাবে সেরে ওঠে
আর নদী-যাওয়ার মাঝখানে ঘোর আতাবাগানের মধ্যে পায়খানা
শুকনো পাতা আর গিরগিটি-শান্তি ছাড়া যেখানে
অন্যকিছু নড়ে উঠছে না
তাহলে আঁচলে বাঁধা গেল সংসারকে
তাহলে লজ্জিত যৌনতার সঙ্গে মিশে থাকল আগুনমিশ্রিত স্নেহ
আদেশ যেখানে, কী আশ্চর্য, অপমান হয়ে আসে না !
এবং নায়কেরাও নেয়াপাতি, পৈতে-গামছা কাঁধে
নাভিতে সরষের তেল, গলায় গরগর করছে শ্রীশ্রীচণ্ডিকা
এবং ঘুমিয়েও পড়ছে ঘন দুপুর ধুতি-বানিয়ানে;
আমার পুরনো মেয়েরা --- বোনঝি-ভাস্তি, পিসশাশুড়ি-বৌঠান
রোদ যখন পেঁপে গাছের মাথায় শান্ত বুলবুলি
গোলামচোর খেলায় হাসতে গিয়ে
কী বিষমটাই না খাচ্ছ পান সুপুরি মুখে !
পরপুরুষ গ্লাসভর্তি কাচের জল, নেবে না?
সমপ্রেম ("জগৎমঙ্গল কাব্য" বইয়ের কবিতা)
সমপ্রেম
চন্দন ভট্টাচার্য
মা ভীষণ জেগে ওঠে
মাঝরাতের আড়ালে
সামান্য কিছুটা শব্দ তো হবেই !
তাছাড়া শুভজিৎ ওইরকম,
আমি যত কানের লতিতে মুখ নামাই ---
চন্দন ভট্টাচার্য
মা ভীষণ জেগে ওঠে
মাঝরাতের আড়ালে
সামান্য কিছুটা শব্দ তো হবেই !
তাছাড়া শুভজিৎ ওইরকম,
আমি যত কানের লতিতে মুখ নামাই ---
"মা-র ঘুম ভেঙে যাবে, প্লিজ"
রেগে ওঠে --- তোমার মায়ের ঘুম চিরকালই ভাঙা
আমি জোড়া লাগাতে আসিনি
অথচ তমাল ছিল শান্ত স্থায়ী গাছের আদল।
প্রথম যেদিন, প্রচুর প্রণাম নিয়ে এল
মা-ও একখানা লুচি খাওয়াবে ব'লে পেছন পেছন....
ভোরবেলা বলেছে, ওকে আবার আনিস
আমার মতো তোর জীবনও মরুভূমি হবে ভাবলে ভুল !
তবুও আগের রাতে মা-র অবিকল পাশ ফেরা
তন্দ্রার ভেতরে, তন্দ্রায় তাকিয়ে থাকা দেয়ালের দিকে
যতক্ষণ না উদ্ভিদ সরীসৃপ হয়ে চোরাপাতায় ডুবে গেছে
এবার তোমাকে নিচ্ছি, শহরতলীর মেয়ে
তোমার সজল ঘাসজমি ছড়িয়ে দিচ্ছি এক-কামরা ফ্ল্যাটের ভেতর
এসো প্রেম, আমাদের সেতুগর্ভে মায়ের প্রথম ঘুম
আজ জন্ম করো
রেগে ওঠে --- তোমার মায়ের ঘুম চিরকালই ভাঙা
আমি জোড়া লাগাতে আসিনি
অথচ তমাল ছিল শান্ত স্থায়ী গাছের আদল।
প্রথম যেদিন, প্রচুর প্রণাম নিয়ে এল
মা-ও একখানা লুচি খাওয়াবে ব'লে পেছন পেছন....
ভোরবেলা বলেছে, ওকে আবার আনিস
আমার মতো তোর জীবনও মরুভূমি হবে ভাবলে ভুল !
তবুও আগের রাতে মা-র অবিকল পাশ ফেরা
তন্দ্রার ভেতরে, তন্দ্রায় তাকিয়ে থাকা দেয়ালের দিকে
যতক্ষণ না উদ্ভিদ সরীসৃপ হয়ে চোরাপাতায় ডুবে গেছে
এবার তোমাকে নিচ্ছি, শহরতলীর মেয়ে
তোমার সজল ঘাসজমি ছড়িয়ে দিচ্ছি এক-কামরা ফ্ল্যাটের ভেতর
এসো প্রেম, আমাদের সেতুগর্ভে মায়ের প্রথম ঘুম
আজ জন্ম করো
সাতশো লাইট ("নবরত্ন কারাদণ্ড সবুজ" বইয়ের কবিতা)
সাতশো লাইট
চন্দন ভট্টাচার্য
এই জ্যোৎস্না দন্তমঞ্জন
চন্দন ভট্টাচার্য
এই জ্যোৎস্না দন্তমঞ্জন
এই জ্যোৎস্না রান্নার হলুদ
ধরবো ব'লে খ্যাপা খাতার জাল পেতেছি যেই
দুশো পাতার বিভাজিকা উঠে আসলো কবিতার বুকে
আড়চোখে দেখতে গিয়ে সেই জ্যোৎস্না
নো ট্রাম্প ডেকে খাও সাতশো লাইট
চাঁদের উঠোন ধোয়ামোছা, চাঁদের ক'খানা
এঁটো বাসন ঘাটে নামাচ্ছে জ্যোৎস্নারাণী কর্মকার
এই জ্যোৎস্না পরচর্চা যেমন হীরেন মুখার্জি সি পি আই।
আধখোলা জানলা দিয়ে
লাহাদের ভিডিও দোকান, ছারপোকা-বেঞ্চিতে বসেছে
আমাদের গ্রামের ইশকুলে এরকম কত জ্যোৎস্না
সারাদিন...ছোট ছোট...তুমি জানো !
ধরবো ব'লে খ্যাপা খাতার জাল পেতেছি যেই
দুশো পাতার বিভাজিকা উঠে আসলো কবিতার বুকে
আড়চোখে দেখতে গিয়ে সেই জ্যোৎস্না
নো ট্রাম্প ডেকে খাও সাতশো লাইট
চাঁদের উঠোন ধোয়ামোছা, চাঁদের ক'খানা
এঁটো বাসন ঘাটে নামাচ্ছে জ্যোৎস্নারাণী কর্মকার
এই জ্যোৎস্না পরচর্চা যেমন হীরেন মুখার্জি সি পি আই।
আধখোলা জানলা দিয়ে
লাহাদের ভিডিও দোকান, ছারপোকা-বেঞ্চিতে বসেছে
আমাদের গ্রামের ইশকুলে এরকম কত জ্যোৎস্না
সারাদিন...ছোট ছোট...তুমি জানো !
কুয়াশাচোর ("তিনটি ডানার পাখি" বইয়ের কবিতা)
কুয়াশাচোর
চন্দন ভট্টাচার্য
আমি যখন ক্লাস নাইন-এ প্রেমের মুখে পড়ি
এবং আমায় নরম ক'রে চিবিয়ে প্রেম
পাতের কোনে নামিয়ে রেখে যায়
তখন আমার জন্ম সার্থক
আমি যেদিন তীক্ষ্ণ কবির বাড়ি গিয়েছি
প্রখর কবি সেজে
কবির মা-ও মুচকি হেসে ভাতের থালায়
একান্নটি সাহিত্যপীঠ সাজিয়ে দিয়েছেন
সেদিন আমার জন্ম সার্থক
সেই যতবার টানারিকশায় উপুড় হতো
মদ-টানা বন্ধুরা
আমি তাদের হারিয়ে ফেলা হাত কুড়িয়ে পা কুড়িয়ে
পেছনে হাঁটতাম
ততই আমার জন্ম সার্থক
হঠাৎ দেখি মাথার ওপর কাক-শিরোপা ছায়া
চুড়োখোঁপার নিচেই গলায় তোড়া-ঘুঙুর
প'রে হলাম জমির কোনে সুপুরিগাছ
টেনে দিচ্ছি ঠাকমা-বুড়ির অর্ধেক সংসার
আমি নিশ্চয় জন্ম সার্থক
এসব কথা লিখতে গিয়ে রাত্রি ডুবে গেছে
এখন যদি বাইরে গিয়ে পাহারা বসি
কুয়াশাভিতু ধরিত্রীকে আমার ঘরে ঘুমিয়ে পড়তে
রাজি করাই
তখন পুনর্জন্ম সার্থক....
চন্দন ভট্টাচার্য
আমি যখন ক্লাস নাইন-এ প্রেমের মুখে পড়ি
এবং আমায় নরম ক'রে চিবিয়ে প্রেম
পাতের কোনে নামিয়ে রেখে যায়
তখন আমার জন্ম সার্থক
আমি যেদিন তীক্ষ্ণ কবির বাড়ি গিয়েছি
প্রখর কবি সেজে
কবির মা-ও মুচকি হেসে ভাতের থালায়
একান্নটি সাহিত্যপীঠ সাজিয়ে দিয়েছেন
সেদিন আমার জন্ম সার্থক
সেই যতবার টানারিকশায় উপুড় হতো
মদ-টানা বন্ধুরা
আমি তাদের হারিয়ে ফেলা হাত কুড়িয়ে পা কুড়িয়ে
পেছনে হাঁটতাম
ততই আমার জন্ম সার্থক
হঠাৎ দেখি মাথার ওপর কাক-শিরোপা ছায়া
চুড়োখোঁপার নিচেই গলায় তোড়া-ঘুঙুর
প'রে হলাম জমির কোনে সুপুরিগাছ
টেনে দিচ্ছি ঠাকমা-বুড়ির অর্ধেক সংসার
আমি নিশ্চয় জন্ম সার্থক
এসব কথা লিখতে গিয়ে রাত্রি ডুবে গেছে
এখন যদি বাইরে গিয়ে পাহারা বসি
কুয়াশাভিতু ধরিত্রীকে আমার ঘরে ঘুমিয়ে পড়তে
রাজি করাই
তখন পুনর্জন্ম সার্থক....
Subscribe to:
Posts (Atom)