ভুবনভোজন চলছে
চন্দন ভট্টাচার্য
এক
"না না, রাস দেখতে যাচ্ছি না গ'
শালির বিয়েতে যাচ্ছি
ধান্যসরা শ্বশুরঘর, সেটি জানা নাই কি !
আমার তো বেস্পতিবারের আগে ফিরতি হবে না
বড় জামাই, ছাড়বে ক্যানে?"
বাসের সামনের সিটে জুলপিভরা গর্ব বসে আছে
দুপাশে পুকুরের মেগা-সিরিয়ালে বৃষ্টির সিঙাড়া ফুটিফুটি --- দেখে
গাছগুলো পালক-কলম, মাটিতে মুখ গুঁজে সাহী খুঁজছে রে !
তার মধ্যে মাঠের উঠোনে রঙিন
নতুন
উপুড়
নৌকোচোখ
ওকে কেউ স্রোতে সম্প্রদান ক'রে আসবে না ?
দুই
বাস আজ শহরে ঢুকবে না
টাটকা রাস লেগে গেছে
"বসে থাকো, বাড়ি বাড়ি নামিয়ে আসবেখ'ন"
ওমা কী হাসির কথা, কিন্তু ছোটোভাই কেঁদে যাচ্ছে
সিটে বসবে, কোলে টানলে মাথা ফাটাফাটি !
ভিড় ঝাঁকুনির মাঝখানে অচেনা বুকের স্তন
পিঠ ঘ'ষটে নেমে গেলে
বাচ্চাগুলো কার, সামলাও --- কন্ডাকটার চেঁচাল
"সে কী, পেছনে ওয়ান টু লেখা নেই ! তিন নম্বরটা আমাদের"
বাসের পেছনের সিটে ইয়ারকি বসেছে হেসে কুটিকুটি বউ নিয়ে
তিন
রঙিন মুকুর পোঁতা মাটিতে
ধুলো-ময়দান। তাতে একটা সিদ্ধিবট মানে
গোটা গ্রামের রাখালি
গেঁয়ো নদীটাকে নায়িকা নামিয়ে পুরো মাঠচাষের সিনেমা
জন্ম জন্ম ধ'রে প্রেমজল সেবা-হাত নিয়ে খেলা ক'রে তারপর
বটের একটা ডাল ভাঙতেই ভেদবমি হল
ধু ধু একা মন্দিরচুড়ো টুসকি দিলে ছুটে এল
ধুতি-শাড়ির হাসিমুখ শকহূণদল....
মাটির ওপর ওমনি উঠে বসেছে আরশি, তাতে রোদ লেগে
সর্বত্র দেয়ালা
চার
তুমি বৃক্ষ, এখন কলপ মেখে শিশুগাছ
টাটকা বসন্ত হ'লে চুড়োখানা
সরবতিলেবুরঙ লেডিসের ছাতা
সামনের দু'পা ভাঁজ ক'রে ব'সে
হাতিশুঁড় বটগাছ দিবাকর পিঠে তুলেছ
নিচে ধুলোঝাঁট পেতে আমাদের একটা নিকোনো পুজো
কপালের জল, চোখের ঘর্মাক্ত দিয়ে তরিজুত করা।
ছোট বারকোশে কাটা পড়ছে ফল,
তার পেছনে উদ্দাম থালায় আলুকুমড়ো ডুমো ডুমো
সে-পশ্চাৎ ডেগ হাঁড়ি
কবেকার আড়য়াল খাঁয়ে লগি ঠেলছ, গুরুভাই
পাঁচ
বাংলার সব উজাড় মন্দিরের মতো তোমারও বিগ্রহ চুরি গেছে
কোন পাথর-ঠান্ডা টুঙ্গিতে বসে আছেন কষ্টিপাথর !
নিত্যসেবা বন্ধ। আর নববস্ত্র পরিধান?
স্নানই হচ্ছে না তার নববস্তর ! রাত পর্যন্ত ড্রয়িংরুমে আলো, মদের হুল্লোড়ে
কী ক'রে শোকেসের মধ্যে শয়নে যান নেতাই?
বাংলার সব শ্রীপাটের মধ্যে আমরা তবু জাগিয়েছি মহাভাব
ষোলো বছরের ভদ্রাণীর লালপাড় সাদা শাড়িতে
চার ঘন্টা কীর্তননের দম জাগিয়ে রেখেছি
আর ভিখারিকে জড়িয়ে ধ'রে সে কী কান্না, কী ক্ষমাপ্রার্থনা
পথের বৈষ্ণবী --- তার তিলকমাটি কপালে নিয়েই ওমনি ঢিপিস ক'রে....
বিগ্রহ করেছি প্রতি মুখ
ছয়
সে মঠ গৌড়ীয়। লঙ্গরখানা খুলে
খোলে-করতালে দু'তিন দফা শান দেয়
চবুতরায় ব'সে শুয়ে আধা বেশ্যা, আধা বৈষ্ণবী
(পাগলও আছে, বলতে হবে কৃষ্ণপাগল)
তবু পেচ্ছাপখানাটি শান্ত, জোড়া তুলসি জোড়া তুলসি
বুনো তুলসির বনে
একটা হা-হতোস্মি বকুল, মরেও মরছে না তেঁই ফুলসন্তানপাত
সাত
আমি যে জীবন --- তা-ই করজোড় পাওয়ার যোগ্যতা
আমি যে পিপাসি, ওগো, সে-ই ব্রহ্মধূপ !
কোঁচড়ভর্তি পড়ল ফুলরেণু এই ঝুরো চিঁড়ে ভারিক্কি মুড়কি
তিনটে আখড়া না ঘুরতেই আমি পোয়াতি আটমাস
ধুলোআসন ক'রে বসলে? তবে মাথা বাঁচাও মাথা বাঁচাও
দুধবর্ষা হবে
মুড়িচুড়ায়
আমরা যারা চেয়েচিন্তে উপবাস
আসি আর সামদাম পেট নিয়ে ঘুম বটতলে ।
উঠে ফের জ্যামিতি-স্কেলের মতো, স্কুলের পিটির মতো.....
ভুবনভোজন চলছে
আট
আহা, কোন ছোটকালে মা গেছে?
আহা, তাই বয়স্ক দেখলেই মা মা করে বুকের মঝধার ?
আমার ছেলেটি বড় ভালো, জানো?
মিলেমিশে থাকি, বৌয়ের চুলে তেল মাখিয়ে
সেই হাত মাথায় মুছে ঘাটে চলে যাই
ওই ওনার পাঁচটি, কেউ ভাত দিতে অরাজি
আহা, কোনও কান সোনা পায় না
আবার কোনও সোনা কান ....
নয়
শাল পাতায় ডাবু হাতায় খিচুড়ি ঢাললাম
কিছু মাটি খাচ্ছে, কিছু তুমি
পেছনে কুকুর (দেখো, তার ওপরে ব'সো না)
পেছনের উঁচুনিচু ভুঁয়ে সনাক্ত হলুদ পায়খানা
থোড়া-সা অরণ্যমতো, পুকুরের সৌপ্রাচীন ঘাট
জয় রাধে --- সক্কল এঁটো হাত জলতরঙ্গ দিল
এক-ক্যামেরা ছবি ওঠে মাড়-শনশন রুমালে ঠোঁটমোছা
ছবি হয় বিড়ি মুখে প্রধান সূপকার
দশ
এই যে অভুক্ত আমি, দ্বিপ্রহর ঢ'লে গেলে তবুও যে আহার্য পেলাম, এবং যে-সে দানাপানি নয়, অন্তিম ভোগান্নটি, আর সেই নিবেদন পরম চৈতন্যসখা অদ্বৈতাচার্যের , আমার এ-সৌভাগ্য আমি কল্পনায়ও আনতে কুন্ঠিত। কেন না, কতদূর থেকে ভোরে বাসি মুখে ঘর ছেড়ে তিন বার বাস পালটিয়ে এবং এ-হেন মন্দিরে সকাল সকাল না এলে না পূর্বভাগে ব'লে রাখলে সংস্থান থাকে না, শ্রীমৎ অদ্বৈতের পরম মহিমা-বলে পূজারী অন্নাহার থাকলেও দেবেন না সকলকে, তদুপরি হা-প্রত্যাশায় বেলা যায়, কেননা প্রসাদ শেষ না হলে তিনি সেবায় বসতে পারছেন কই?
এভাবে ভাঙা দেউলের মেঝেয় আমি থেবড়ে বসি, রেওয়াজটি বৃন্দাবনসম। এই নবদ্বীপের প্রতি ধূলিকণায় তিনি রয়েছেন মহাপ্রভু, কোন ধুলো সরিয়ে তুমি আসন পাততে চাও রে পাগল ! বেরঙা দেওয়ালের জীর্ণতার মধ্যে চোখ থাকলে আমি তদরূপ দেখতে পাবো, দলা দলা আতপ ভাতের গোগ্রাস পাবো কলাপাতায় চল্লিশ টাকার কুশলতা। দুই কুমড়োভাজা-কালোর ডান দিকে বসেছেন শীর্ণ লম্বা নাকটি-ছাড়া-কিছু-নেই সে-ব্রাহ্মণ, বাঁয়ে এয়োস্ত্রী যেন ভাতের মধ্যে তুলোসিপাতাগুচ্ছ --- খাও বাবা ওইটিই তো আসল পেসসাদ। কলকল ডাল বইলো, অদ্বৈতের মুলোছেঁচকি তেঁতুলের চাটনি ঘি-পায়েস পুরুত ঠাকুরের ভুঁড়ির অনেক নিচে গরদের ফাঁস সব কলাপাতায় মুড়ে যেই.... দেয়ালের আড়ালে দেখি মাগনা বড় হাজরি নিচ্ছেন জয়
আমার রোগা রিকশাওলা ভাইয়ের জয়!
এগারো
সন্ধে হল। পাথর এখনও তপ্ত। ঠাকুর, নেবো কি?
সকলেই সংগ্রহে এসেছে।
আমি ভুলিতে পারি না সেই ব্রহ্মময়ী রাই ...
বারো
গাছে ফুল নেই, ফুল তুলিবেন না। ইহা গৌড়ের মধ্যে সর্বাপেক্ষা প্রাচীন মুসলমান কীর্তি। বারোটি দ্বারপথ, এই ধারণায় সম্ভবত নাম বারোদুয়ারি। রাধারাণী বলছেন, ও-গোবিন্দ, বলো তো মানুষ এত কষ্ট করে কেন? এই যে চতুর্লক্ষ ভিড়, এখানে পায়খানা, এখানেই চুল আঁচড়ানো। ইহা সুলতান নসরত শাহের অমর স্থাপন। বাচ্চাগুলোর মুখে ডুমো মাছি বসছে, তুমি এখানে থেকো না। আমার হৃদয়মাঝে বিচিত্র পালঙ্ক আছে, আশেপাশে রসের বালিশ। এবার খোল উঠে দাঁড়াল, দক্ষিণপূর্ব ভাগেও দুলছে একটি অক্ষয় পীঠ, সম্ভবত ইহা মুয়াজ্জিম নমাজের সময় ব্যবহার করিতেন। সেই মাঠে অজস্র বৈষ্ণব প্লাস্টিক পেতে আম খায়। আর মা নন্দরানী, তিনি? তিনি আজ গোপালের আরতি করবেন। হ্যালো চেক। আমাদের মায়েরা বাবারা ভায়েরা বোনেরা .....বাউন্ডারিতে পেচ্ছাপ উবু হলে আমিও উলুধ্বনি ---- চায়ের প্যাকেট, ব্যাটফেদার, কানের মাকড়ি, টাইটানিক দশ টাকা দশ টাকা দশ টাকা। এইমাত্র একজন ভক্ত একশোর একটি নোট দিলেন ; তাহাতে শুইবা তুমি, চরণ চাপিব আমি, ঘুচে যাবে মনের আলিস। আমি কাউকে কষ্ট করতে বলিনি গো রাধা। আপন সহজে মিলে। ধন্যবাদ।
পর কভু মিলে না।
তেরো
রোগা কুব্জ ধুতি-চাদর-উড়নির ত্রিলাল কাপালিক
মাথায় চাঁদের রিপেয়ার-করা খিলান নিয়ে ঘাসমাঠ পার হয়ে গেল
তাবিজ-মোড়া কচি বটপাতা, সোনালি কাঁটা কাঁটায়
জাগ্রত ক'রে দিচ্ছে এ-শরীর অষ্টধাতুর। তাছাড়া খোল সারাই, খোল বিক্কিরি।
শিতলপাটি মাসির কাছে বড় হাই ছোট আব্বুলিশগুলো
গুটিয়ে থিয়ে করা দেখে বলছি ---
মেলার শেষ রাতটুকু ওই কোলে মাথা দিয়ে....?
"ঘুমায়ো"
চন্দন ভট্টাচার্য
এক
"না না, রাস দেখতে যাচ্ছি না গ'
শালির বিয়েতে যাচ্ছি
ধান্যসরা শ্বশুরঘর, সেটি জানা নাই কি !
আমার তো বেস্পতিবারের আগে ফিরতি হবে না
বড় জামাই, ছাড়বে ক্যানে?"
বাসের সামনের সিটে জুলপিভরা গর্ব বসে আছে
দুপাশে পুকুরের মেগা-সিরিয়ালে বৃষ্টির সিঙাড়া ফুটিফুটি --- দেখে
গাছগুলো পালক-কলম, মাটিতে মুখ গুঁজে সাহী খুঁজছে রে !
তার মধ্যে মাঠের উঠোনে রঙিন
নতুন
উপুড়
নৌকোচোখ
ওকে কেউ স্রোতে সম্প্রদান ক'রে আসবে না ?
দুই
বাস আজ শহরে ঢুকবে না
টাটকা রাস লেগে গেছে
"বসে থাকো, বাড়ি বাড়ি নামিয়ে আসবেখ'ন"
ওমা কী হাসির কথা, কিন্তু ছোটোভাই কেঁদে যাচ্ছে
সিটে বসবে, কোলে টানলে মাথা ফাটাফাটি !
ভিড় ঝাঁকুনির মাঝখানে অচেনা বুকের স্তন
পিঠ ঘ'ষটে নেমে গেলে
বাচ্চাগুলো কার, সামলাও --- কন্ডাকটার চেঁচাল
"সে কী, পেছনে ওয়ান টু লেখা নেই ! তিন নম্বরটা আমাদের"
বাসের পেছনের সিটে ইয়ারকি বসেছে হেসে কুটিকুটি বউ নিয়ে
তিন
রঙিন মুকুর পোঁতা মাটিতে
ধুলো-ময়দান। তাতে একটা সিদ্ধিবট মানে
গোটা গ্রামের রাখালি
গেঁয়ো নদীটাকে নায়িকা নামিয়ে পুরো মাঠচাষের সিনেমা
জন্ম জন্ম ধ'রে প্রেমজল সেবা-হাত নিয়ে খেলা ক'রে তারপর
বটের একটা ডাল ভাঙতেই ভেদবমি হল
ধু ধু একা মন্দিরচুড়ো টুসকি দিলে ছুটে এল
ধুতি-শাড়ির হাসিমুখ শকহূণদল....
মাটির ওপর ওমনি উঠে বসেছে আরশি, তাতে রোদ লেগে
সর্বত্র দেয়ালা
চার
তুমি বৃক্ষ, এখন কলপ মেখে শিশুগাছ
টাটকা বসন্ত হ'লে চুড়োখানা
সরবতিলেবুরঙ লেডিসের ছাতা
সামনের দু'পা ভাঁজ ক'রে ব'সে
হাতিশুঁড় বটগাছ দিবাকর পিঠে তুলেছ
নিচে ধুলোঝাঁট পেতে আমাদের একটা নিকোনো পুজো
কপালের জল, চোখের ঘর্মাক্ত দিয়ে তরিজুত করা।
ছোট বারকোশে কাটা পড়ছে ফল,
তার পেছনে উদ্দাম থালায় আলুকুমড়ো ডুমো ডুমো
সে-পশ্চাৎ ডেগ হাঁড়ি
কবেকার আড়য়াল খাঁয়ে লগি ঠেলছ, গুরুভাই
পাঁচ
বাংলার সব উজাড় মন্দিরের মতো তোমারও বিগ্রহ চুরি গেছে
কোন পাথর-ঠান্ডা টুঙ্গিতে বসে আছেন কষ্টিপাথর !
নিত্যসেবা বন্ধ। আর নববস্ত্র পরিধান?
স্নানই হচ্ছে না তার নববস্তর ! রাত পর্যন্ত ড্রয়িংরুমে আলো, মদের হুল্লোড়ে
কী ক'রে শোকেসের মধ্যে শয়নে যান নেতাই?
বাংলার সব শ্রীপাটের মধ্যে আমরা তবু জাগিয়েছি মহাভাব
ষোলো বছরের ভদ্রাণীর লালপাড় সাদা শাড়িতে
চার ঘন্টা কীর্তননের দম জাগিয়ে রেখেছি
আর ভিখারিকে জড়িয়ে ধ'রে সে কী কান্না, কী ক্ষমাপ্রার্থনা
পথের বৈষ্ণবী --- তার তিলকমাটি কপালে নিয়েই ওমনি ঢিপিস ক'রে....
বিগ্রহ করেছি প্রতি মুখ
ছয়
সে মঠ গৌড়ীয়। লঙ্গরখানা খুলে
খোলে-করতালে দু'তিন দফা শান দেয়
চবুতরায় ব'সে শুয়ে আধা বেশ্যা, আধা বৈষ্ণবী
(পাগলও আছে, বলতে হবে কৃষ্ণপাগল)
তবু পেচ্ছাপখানাটি শান্ত, জোড়া তুলসি জোড়া তুলসি
বুনো তুলসির বনে
একটা হা-হতোস্মি বকুল, মরেও মরছে না তেঁই ফুলসন্তানপাত
সাত
আমি যে জীবন --- তা-ই করজোড় পাওয়ার যোগ্যতা
আমি যে পিপাসি, ওগো, সে-ই ব্রহ্মধূপ !
কোঁচড়ভর্তি পড়ল ফুলরেণু এই ঝুরো চিঁড়ে ভারিক্কি মুড়কি
তিনটে আখড়া না ঘুরতেই আমি পোয়াতি আটমাস
ধুলোআসন ক'রে বসলে? তবে মাথা বাঁচাও মাথা বাঁচাও
দুধবর্ষা হবে
মুড়িচুড়ায়
আমরা যারা চেয়েচিন্তে উপবাস
আসি আর সামদাম পেট নিয়ে ঘুম বটতলে ।
উঠে ফের জ্যামিতি-স্কেলের মতো, স্কুলের পিটির মতো.....
ভুবনভোজন চলছে
আট
আহা, কোন ছোটকালে মা গেছে?
আহা, তাই বয়স্ক দেখলেই মা মা করে বুকের মঝধার ?
আমার ছেলেটি বড় ভালো, জানো?
মিলেমিশে থাকি, বৌয়ের চুলে তেল মাখিয়ে
সেই হাত মাথায় মুছে ঘাটে চলে যাই
ওই ওনার পাঁচটি, কেউ ভাত দিতে অরাজি
আহা, কোনও কান সোনা পায় না
আবার কোনও সোনা কান ....
নয়
শাল পাতায় ডাবু হাতায় খিচুড়ি ঢাললাম
কিছু মাটি খাচ্ছে, কিছু তুমি
পেছনে কুকুর (দেখো, তার ওপরে ব'সো না)
পেছনের উঁচুনিচু ভুঁয়ে সনাক্ত হলুদ পায়খানা
থোড়া-সা অরণ্যমতো, পুকুরের সৌপ্রাচীন ঘাট
জয় রাধে --- সক্কল এঁটো হাত জলতরঙ্গ দিল
এক-ক্যামেরা ছবি ওঠে মাড়-শনশন রুমালে ঠোঁটমোছা
ছবি হয় বিড়ি মুখে প্রধান সূপকার
দশ
এই যে অভুক্ত আমি, দ্বিপ্রহর ঢ'লে গেলে তবুও যে আহার্য পেলাম, এবং যে-সে দানাপানি নয়, অন্তিম ভোগান্নটি, আর সেই নিবেদন পরম চৈতন্যসখা অদ্বৈতাচার্যের , আমার এ-সৌভাগ্য আমি কল্পনায়ও আনতে কুন্ঠিত। কেন না, কতদূর থেকে ভোরে বাসি মুখে ঘর ছেড়ে তিন বার বাস পালটিয়ে এবং এ-হেন মন্দিরে সকাল সকাল না এলে না পূর্বভাগে ব'লে রাখলে সংস্থান থাকে না, শ্রীমৎ অদ্বৈতের পরম মহিমা-বলে পূজারী অন্নাহার থাকলেও দেবেন না সকলকে, তদুপরি হা-প্রত্যাশায় বেলা যায়, কেননা প্রসাদ শেষ না হলে তিনি সেবায় বসতে পারছেন কই?
এভাবে ভাঙা দেউলের মেঝেয় আমি থেবড়ে বসি, রেওয়াজটি বৃন্দাবনসম। এই নবদ্বীপের প্রতি ধূলিকণায় তিনি রয়েছেন মহাপ্রভু, কোন ধুলো সরিয়ে তুমি আসন পাততে চাও রে পাগল ! বেরঙা দেওয়ালের জীর্ণতার মধ্যে চোখ থাকলে আমি তদরূপ দেখতে পাবো, দলা দলা আতপ ভাতের গোগ্রাস পাবো কলাপাতায় চল্লিশ টাকার কুশলতা। দুই কুমড়োভাজা-কালোর ডান দিকে বসেছেন শীর্ণ লম্বা নাকটি-ছাড়া-কিছু-নেই সে-ব্রাহ্মণ, বাঁয়ে এয়োস্ত্রী যেন ভাতের মধ্যে তুলোসিপাতাগুচ্ছ --- খাও বাবা ওইটিই তো আসল পেসসাদ। কলকল ডাল বইলো, অদ্বৈতের মুলোছেঁচকি তেঁতুলের চাটনি ঘি-পায়েস পুরুত ঠাকুরের ভুঁড়ির অনেক নিচে গরদের ফাঁস সব কলাপাতায় মুড়ে যেই.... দেয়ালের আড়ালে দেখি মাগনা বড় হাজরি নিচ্ছেন জয়
আমার রোগা রিকশাওলা ভাইয়ের জয়!
এগারো
সন্ধে হল। পাথর এখনও তপ্ত। ঠাকুর, নেবো কি?
সকলেই সংগ্রহে এসেছে।
আমি ভুলিতে পারি না সেই ব্রহ্মময়ী রাই ...
বারো
গাছে ফুল নেই, ফুল তুলিবেন না। ইহা গৌড়ের মধ্যে সর্বাপেক্ষা প্রাচীন মুসলমান কীর্তি। বারোটি দ্বারপথ, এই ধারণায় সম্ভবত নাম বারোদুয়ারি। রাধারাণী বলছেন, ও-গোবিন্দ, বলো তো মানুষ এত কষ্ট করে কেন? এই যে চতুর্লক্ষ ভিড়, এখানে পায়খানা, এখানেই চুল আঁচড়ানো। ইহা সুলতান নসরত শাহের অমর স্থাপন। বাচ্চাগুলোর মুখে ডুমো মাছি বসছে, তুমি এখানে থেকো না। আমার হৃদয়মাঝে বিচিত্র পালঙ্ক আছে, আশেপাশে রসের বালিশ। এবার খোল উঠে দাঁড়াল, দক্ষিণপূর্ব ভাগেও দুলছে একটি অক্ষয় পীঠ, সম্ভবত ইহা মুয়াজ্জিম নমাজের সময় ব্যবহার করিতেন। সেই মাঠে অজস্র বৈষ্ণব প্লাস্টিক পেতে আম খায়। আর মা নন্দরানী, তিনি? তিনি আজ গোপালের আরতি করবেন। হ্যালো চেক। আমাদের মায়েরা বাবারা ভায়েরা বোনেরা .....বাউন্ডারিতে পেচ্ছাপ উবু হলে আমিও উলুধ্বনি ---- চায়ের প্যাকেট, ব্যাটফেদার, কানের মাকড়ি, টাইটানিক দশ টাকা দশ টাকা দশ টাকা। এইমাত্র একজন ভক্ত একশোর একটি নোট দিলেন ; তাহাতে শুইবা তুমি, চরণ চাপিব আমি, ঘুচে যাবে মনের আলিস। আমি কাউকে কষ্ট করতে বলিনি গো রাধা। আপন সহজে মিলে। ধন্যবাদ।
পর কভু মিলে না।
তেরো
রোগা কুব্জ ধুতি-চাদর-উড়নির ত্রিলাল কাপালিক
মাথায় চাঁদের রিপেয়ার-করা খিলান নিয়ে ঘাসমাঠ পার হয়ে গেল
তাবিজ-মোড়া কচি বটপাতা, সোনালি কাঁটা কাঁটায়
জাগ্রত ক'রে দিচ্ছে এ-শরীর অষ্টধাতুর। তাছাড়া খোল সারাই, খোল বিক্কিরি।
শিতলপাটি মাসির কাছে বড় হাই ছোট আব্বুলিশগুলো
গুটিয়ে থিয়ে করা দেখে বলছি ---
মেলার শেষ রাতটুকু ওই কোলে মাথা দিয়ে....?
"ঘুমায়ো"
No comments:
Post a Comment